। অলক্ষ্যে।


এক মানুষের সীমানা টানা ভূখণ্ডে কে থাকবে, আর বাইরে যাবে কে,
তাই নিয়ে শাসনের শাসানি আর প্রতিবাদী মিছিলের চেঁচানির চাপানউতোর দেখে,
সীমান্ত হওয়া পাহাড়টা তার গায়ে পড়া একটা নদীকে হেসে বললো, ‘ ওরা জানেও না যে..’


পাহাড়টা পেরোলেই হলুদ মানুষের দেশ। সেখানে মানুষেরা সব মানে বিনা আওয়াজে,
গলায় একটু জোর হলেই, চিরতরে নীরবতা নেমে আসে
সে বিরোধী স্বরে,
সেই দেশে একটা গোটা জাতকে ভেঙে মগজধোলাই যন্ত্র বাধ্যতম নাগরিক গড়ে,
পুরোটাই রাষ্ট্রের কল্যাণ হেতু। তাদের পাঁচিল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া বিষণ্ণ নদী,
আরো বড় নদীতে মিশে যাওয়ার আগে মোহানাতে হেসে বলে ‘দিদি, ওরা জানতো যদি..’


আর একটা ধারে বিস্তীর্ণ মরূভূমি, মাটি খুঁড়লেই মেলে গলানো সোনা,
সে ভূমিতে ঈশ্বরে বন্দীদের রাজ্যপাট। পৃথিবী আতঙ্কে থাকে কবে হয় যুদ্ধ ঘোষণা,
বস্তুত এপাশে ওপাশে ক্ষেপণাস্ত্র লেনদেন হয় রুটিনের বিনিময়প্রথায়,
জীবিত লোক লাশ হয়ে যায় যখনতখন। অবশ্য কোন দেশে আর সেটা বাদ যায়,
ওটাই দস্তুর ইতিহাসে।  সারি সারি সাঁজোয়া বাহিনী বুকের ওপর
সীমান্তের দিকে পা বাড়ালে,
বালিয়াড়িরা মরূর গরম হাওয়াকে ডেকে ফিসফিস করে বলে,
‘ওরা জানে না যে আড়ালে আড়ালে..’


চারদিকে নানান নামের দেশ, যদিও সীমান্তে পৃথিবী কোনো চিহ্ন রাখেনা
চেকপোস্ট বন্দুক জেলখানা পাসপোর্ট বেড়াগুলো শুধু  মানুষের
বেড়ি-কল্পনা,
পাখিরা উৎসাহী নয় তাতে, গাছেদেরও যায়আসেনা।জড়ো হয়ে বিভিন্ন পতাকার ভ্রমে,
মানুষ অন্য মানুষকে কোথাও ঢুকতে দেয়না, বৃত্তরা ছোটো হয়ে আসে ক্রমে ক্রমে,
পাঁচিল তুলে নানা গোষ্ঠীরা সরাসরি বা পরোক্ষ সন্ত্রাসে দাবী করে মাটির মালিকানা,
ঘাতক যুদ্ধের ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়া কালো মেঘ আকাশকে ডেকে বলে ‘ ওদের বোধহয় নেই জানা..’


মেরুপ্রদেশের যত নির্জন আইসবার্গ, মানুষ দেখেনা তারা, স্বভাবত কপটতাহীন,
গলে যেতে যেতে, গলে যেতে যেতে, হিমেল সমুদ্রকে বরফের স্বরে বলে আর তো ক’দিন,
তারপরো ভেসে যাবে সব। ওদের তো নোয়াহ নেই , নৌকা বানাচ্ছে না যে কেউ এখনো,
মাটি ভেসে গেলে ওই যুদ্ধ ধর্ম আর সীমাহীন ক্ষমতার দাম থাকে কোনো?


সমুদ্র তার জল আরেকটু বাড়িয়ে নিরুত্তাপে বলে,
বাদ দাও,
বরং মহাপ্লাবনের কদিন আর  বাকি আছে গোনো..


আর্যতীর্থ