।আঠাশ।


কমতে কমতে বন্ধুর সংখ্যা মোটে আঠাশে এসে ঠেকেছে।
ওহে ফ্রেন্ডলিস্টে পাঁচ হাজার ছোঁয়া গর্বিত ফেসবুককার, হেসোনা না তা শুনে,
তোমারও একই হাল। এই দেশে থাকলে এ পোড়াকপাল শেয়ার না করে উপায় নেই।
আসলে ওদের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে কোনো কথা হয়না তো,
সেলফির ঘনঘটা ঘটেনি কখনো,
এমনকি রাস্তার পাশে রোদ্দুর ঝড় সয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেয়ারও করোনি,
বিনা দৃকপাত হেঁটে চলে গেছো সময়ের গায়ে ভারী ব্যস্ততা মেখে।
তবু তারা পরের দিন এবং তার পরের দিনও তোমার জন্য পথে রয়েছে দাঁড়িয়ে ,
স্বভাবত স্থাণু আর মূক ও বধির ,তাই চোখের সামনে থেকে গিয়েছে হারিয়ে,
অথচ ওরা না হলে তোমার তাবত কাজ, সোহাগ ও সখ,
রোজকার নিচুমাথা অনন্ত আড্ডাখানা মুঠোফোনময়,
সবই বেকার,
তোমার ,আমার, তার, আমাদের  পড়শি বা চিরশত্তুরেরও
কাজকারবার আঠাশ সুহৃদ মিলে সামলিয়ে রাখে,
অথচ আমাদের দেখো, থোড় বড়ি খাড়ার এই অনন্ত আবর্তে ঘুরে,
দেখিও না তাদেরকে যাপনের ফাঁকে।


ওরা সব গাছ।
অশত্থ শিমুল বট, রাধা ও কৃষ্ণচূড়া, শাল সেগুনের মতো চেনা বা অচেনা,
ডালপালা মেলে যারা এধারে ওধারে শহুরে পথের মোড়ে,
গ্রামের বাথান ঘিরে কিংবা গভীর অরণ্যে ঘেঁষাঘেষি করে,
ওরা সেই বৃক্ষের সারি,
অক্লেশে যাদেরকে কেটে,
বধ্যভূমির ওপর ঘরবাড়ি তুলে চলে স্কোয়ারফিট পিছু লালাঝরা প্রোমোটারি,
ওরা সেই নীলকন্ঠ গাছ,
কমতে .. কমতে.. কমতে.. কমতে,
মাথাপিছু আঠাশটা পড়ে আছে আজ।


কমে যায় সংখ্যাটা প্রতিদিন, কুড়ুল পড়ছে এসে নিজেদেরই পা’য়,
মানুষবসতি শুধু ওঠে চারদিকে, বন্ধুর মৃতদেহ সব জায়গায়।
প্রজন্ম পাবে বুঝি ইঁট কংক্রীটে মোড়া বৃক্ষবিহীন এক তপ্ত ভারত,


কে জানে সে মৃত দেশে স্কোয়ারফিট পিছু কত দামী হবে ইমারত...


আর্যতীর্থ