। ভেতরের শীত।


( James Kinney’র The cold within অনুসারে..)


হঠাৎ আবহাওয়া বদলে প্রবল তুষারপাত শুরু হলো দেশে।
ঠান্ডায় জমে হিম চারদিক, হি হি কাঁপে লোকজন ক্লেশে,
এ গরম দেশে শীত এমন ভয়াল হয়ে কখনো আসেনি,
কতদিন হয়ে গেলো সোনারোদ্দুর দিতে সূর্য হাসেনি,
হিসেবের বার। এ সময়ে, গুনে গুনে ছয়জন লোক
এক হিম জনপদে তুষারের মাঝে হলো নিরালা আটক,
বেরোবার পথ ঢাকা, কোথায় যাওয়ার কোনো নেই সম্ভাবনা,
আগুন জ্বালিয়ে নিয়ে, চুপচাপ তাই ঘিরে বসে ছয়জনা।
সবারই রয়েছে লাঠি, তুষারে চলতে হলে প্রয়োজন বড়,
আগুনের চারদিকে বসেছে পথিককুল, শীতে জড়সড়।


পরিচয় দেওয়া যাক একে একে এদের সবার চলো আগে।
প্রথমটি বড়লোক, সেনসেক্স বেড়ে চলে যাদের সোহাগে,
তাদের একজন।দ্বিতীয় তিলকধারী, পাপ জানে বাকি ধর্মকে,
বসেছে একটু আলাদা, তৃতীয় ব্যক্তি যদি ছুঁয়ে ফেলে ওকে!
তিনে দলিত চর্মকার। কাজের সন্ধানে এসে আজ গেছে ফেঁসে,
চতুর্থ আল্লাহনির্ভর মুসলমান, নমাজ আর রোজা রাখা আছে অভ্যেসে।
পঞ্চম সর্বস্ব খুইয়েছে চিটফান্ডে, ভান্ডারে জমা শুধু প্রকান্ড অভাব,
ছয় নম্বর লোকটি বুদ্ধি-পরজীবি, আখের গোছানো তার পুরনো স্বভাব।


সকলে গোল হয়ে বসেছে আগুনের চারপাশে, সব শুনশান
বড়লোক নির্বিকার , হাঁটুতে ঠেকনা দিয়ে গেয়ে চলে গান,
কাল সকালেই কপ্টার এসে যাবে ঠিক। তিলক জপছে মালা
কানে তালা ভগবান কিছুটা বোঝেন যদি ঠান্ডার জ্বালা,
বড় ভালো হয়। দলিত আর সবহারা চেয়ে আগুনের দিকে,
ভেবে যায় কিভাবে হাঁড়িতে চালের সম্ভাবনা ক্রমে হলো ফিকে,
সময়ের চাপে। ইসলামী সন্তর্পণে হিন্দুকে মাপে আড়ে আড়ে,
বু্দ্ধি-পরজীবিটি ক্রমে ঘেঁষে যায় বড়লোক যেদিকে সেধারে।
হঠাৎ সকলে বোঝে ,  যেন আরো কেটে বসে দাঁত ঠান্ডার
শিখা হয় নিভুনিভু, লাঠি গুলো ছাড়া কোনো কাঠ নেই আর।


কিন্তু কে যাবে লাঠি ভেঙে নিভন্ত আগুনের শিখা উস্কাতে?
সকলেরই দোনোমনো, যে যার নিজস্ব লাঠি পাকড়েছে হাতে।
আমারই ট্যাক্সের টাকা ভর্তুকি করে দিয়ে ওরা বসে খাবে,
আমি কেন লাঠি দেবো, হি হি শীতে কাঁপলেও বড়লোক ভাবে।
আমি লাঠি দিই আর মোল্লার ব্যাটা এসে আমায় মারুক,
ভাবছে তিলক খালি, তার লাঠি দিতে মোটে নয় উৎসুক।
ওই বড়লোকগুলো সব খেলো আমাদের পকেট নিকিয়ে,
ভাবে সবহারা , আবার লাঠিটা এসে না নেয় ছিনিয়ে।
আমি লাঠি দিই আর তিলক করুক এসে দেশ থেকে বার,
গুমরায় ইসলামী, কক্ষনো ছাড়বেনা লাঠিখানা তার।
বাবুদের এদিকে নজর, নির্ঘাত চাইবে তারই লাঠিখানা,
দলিত ভাবছে বসে, এদেশে এটাই হয় সেটা তার জানা।
বুদ্ধিজীবিটি  আজ অবধি করেননি কিছু সুবিধা না দেখে
স্বভাবত দেখছেন কে হাতে রাখে আর লাঠি দেয় কে কে।


পরদিন ভোরে নিভে যাওয়া আগুনের চারপাশে ছ’খানা লাশ।
ওদের মারেনি শীত, বস্তুত বাঁচবার ছিলো বহু অবকাশ,
শুধু লাঠি ভেঙে জ্বালানি করতে হতো জীবনের জন্য।


তুষারকামড় নয়, ওদের ঘাতক শীত জেনো ছিলো অন্য।


আর্যতীর্থ