।চাঁদমারি।


নকীব চেঁচালো একদিন ভোরে, ‘ জড়ো হও সব জনগণ,
যে যেখানে আছো কাজ ছেড়ে আজ এইদিকে ঢালো তনুমন।
সুখবর আছে মস্ত সে এক , সকলের কানে যাক তা
প্রগতির দিকে চলেছে যে দেশ, আগামী এনেছে বার্তা।
অলিন্দে রাখো চোখ সব্বাই, হবে মহারাজ দর্শন,
হতে পারে আজ স্বর্গের থেকে পারিজাত ফুল বর্ষণ।
নিজের মুখেই বলবেন রাজা, কত এ মহান কীর্তি,
বিরোধীর যত প্রশ্নের ঢিলে এটা পাটকেল ফিরতি।


শুনে চাষী ভাবে এতদিনে তবে সুরাহা হয়েছে শস্যের
এতদিন এক সের দাম দিয়ে ফড়েরা নিয়েছে দশ সের।
নির্ঘাত রাজা করেছেন কিছু , প্রগতির তুলি বুলিয়ে
মহাজন দেবে ন্যায্য মূল্য ভান্ডারে ধান তুলিয়ে।
খিদের শেকল আজীবন পরে দাদনের ক্রীতদাস,
রাজার ঘোষণা শুনে সে আশায়, খেতে পাবে বারোমাস।


শ্রমজীবী ভাবে এবারে খুলবে কারখানাদের তালা,
চাকরী হারিয়ে কঠিন জোটানো দুবেলা ভাতের থালা।
আজকে ঘোষণা নির্ঘাত বান-জোয়ার আনবে শিল্পে
ঘাম দিয়ে গড়া কামের ইনাম এতদিনে ঠিক  মিলবে।
স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে বেকারি যাদের গ্লানি,
( অনশনে কেউ কত সাড়া দেয় সকলেই সেটা জানি)
তারা বুক বাঁধে নতুন আশায়, হয়তো চাকরি জুটবে
ম্লান হয়ে থাকা শিক্ষিত মুখে অবশেষে হাসি ফুটবে।


রোগীরা ভাবছে হয়তো এবারে বাজেট বাড়বে স্বাস্থ্যে,
উড়িয়ে দেবে না ব্যাঙের আধুলি কর্পোরেটের কাস্তে।
সরকারি যত হাসপাতালের যন্ত্র এবং যন্ত্রী,
এত ঠিক হবে, শরীর খারাপে ভর্তি হবেন মন্ত্রী।
চিটে ঠকা লোক ভাবে অবশেষে আসছে বিশেষ ঘোষণা,
( এতদিন বলা হয়েছে ঘুরিয়ে বুড়ো আঙুলটি চোষো না)
ধরা পড়ে যাবে সবকটা ঠগ, পর্দা আড়ালে কালো হাত,
এই আশা বুকে শুরু করে তারা ‘জয় জয়’ বলে কালোয়াত।


অবশেষে এলো মাহেন্দ্রক্ষণ, সামনে এলেন নৃপতি
( বীরবাহু তিনি, টক্করে তার পিছু হটে সব বিপদই)।
জলদমন্দ্র কন্ঠতে রাজা বেছে বেছে কন শব্দ,
বরাবরই তার তীক্ষ্ণ ভাষণে বিরোধী হয়েছে জব্দ।
রাজা হাঁকলেন , মহাশূন্যতে দেশ দিলো আজ পাড়ি,
ইচ্ছে করলে গোলাগুলি আজ চাঁদেও চালাতে পারি।
আগামীতে যদি চন্দ্রপৃষ্ঠে কখনো যুদ্ধ লাগে,
জেনে রাখো তবে, সেই চাঁদমারি আমাদের জয়ভাগে।


জনতার মাঝে কে যেন চেঁচালো, ‘ পেটে বড় খিদে জাগে...’


আর্যতীর্থ