।চোদ্দটা মোমবাতি।


চোদ্দটা ভূত খোঁজো চতুর্দশীতে।
প্রাক্তন হলো যারা নিরালা নিভৃতে,
বিশেষ পুরনো নয়, গায়ে আজও চেনা জীবনের গন্ধ,
মরার কারণ সেই করোনার চেনা ঘোষ নন্দ,
সেরকম চোদ্দটা ভূত খুঁজি চলো,
বিবেক নাড়িয়ে গেছে যাদের মরণ,
চোদ্দটা মোম দিয়ে জীবিতরা একদিন করুক স্মরণ।


এক নম্বরে নাও জামলোর নাম।
ভুলে গেছো জানি তাকে, ফের তুললাম,
লঙ্কার ক্ষেত থেকে হেঁটে বাড়ি ফেরেনি দ্বাদশী,
অন্ত্যজ মানুষেরা সুমারির ফাউ, তাই তার মৃত্যুতে কেউ নয় দোষী।
যে ভারত মরে গেলে কেউ কাঁদেনা,
তাদের প্রতিনিধি ছিলো সে বালিকা,
একখানা মোম দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা কোরো।
জানি পাপ পোড়াবে না শিখা।


দুই নম্বরে থাক খুনে লাল রুটির ভুখারি।
রেল চলে গিয়েছিলো যাদের ওপরে, শ্রমিকের সেই শব-সারি,
এগারো জনের নাম কেউ জানেনা,
নাকি জানে মুখে আনে না?
লকডাউন হোক বা না হোক, লাইনে চলতে পারে ট্রেন,
সারাদিন হেঁটে যারা ক্লান্তিতে সেটা ভুলেছেন,
সে বোকার খেসারত দেশ কেন দেবে?
মোমবাতি থাক তাই না মেটা হিসেবে।


তিন নম্বরে  চেনামুখ ডাক্তার কেউ।
কেড়ে নিয়ে গেছে যাকে জ্বরের  সুনামি ঢেউ,
টিকা পেয়ে বা না পেয়ে গিয়েছিলো লড়তে যে রাষ্ট্রের বোড়ে। আদতে যোদ্ধা নয়, তবুও সে নিধিরাম গিয়েছিলো প্রাণপণ লড়ে, যদিও অন্তিমকালে বুঝেছিলো কেউ নেই সাথে,
সঞ্চয় শেষ হলো বাঁচবার চেষ্টা চালাতে,
পরিবার কিছু পাবে সেই আশা আজও মরীচিকা।
তার নামে জ্বেলো এক মোমবাতি-শিখা।


চার নম্বর মোম পাক সেই লাশ,
জীবিততে পায়নি যে শ্বাসের বাতাস।
চারদিকে হাহাকার, অক্সিজেন নেই কোনো সিলিন্ডারে,
মৃতদের থেকে নল জীবিতরা কাড়ে,
শুধু গুঁজে দিতে শেষ শ্বাস তখনও লড়াই করা প্রিয় ফুসফুসে,
এইভাবে এর আগে মরেনি মানুষে।
জীয়ন্তে অক্ষম দেশ দিতে দম,
চলো তাকে মোম দিই, স্মৃতি দিক ওম।


পাঁচে থাক সেই পরিবার,
রোজগার যার হলো কোভিড-শিকার।
কিছুদিন চেয়েচিন্তে চলে, একদা স্বচ্ছলতায় হাত পাতা মানা,
এই দেশে যে কোনো প্রদেশে আছে ছড়িয়ে ঠিকানা।
একদিন বুঝেছিলো, আর কিছু নেই বেচবারও,
আগামীর অন্ধকার আরো বেশি গাঢ়,
সুতরাং মা বাবা অনায়াস লাশ হয়ে গেছে সম্তান মেরে ।
সেই মৃত মোম পাক, আয়নায় ওরাই তো তুমি আমি যে রে।


ছয়ে সেই জলে ভেজা লাশ,
গঙ্গার বুকে যার একলা সফর।
কোনো এক কালে তার নামপরিচয় ছিলো,আর ছিলো থিতু ঘর, বেমালুম মুছে গেছে মারীতে সুমারী থেকে।
মোম ছাড়া ওকে আর মনে রাখবে কে?


সাতে কোনো ধার্মিক, পুণ্যের খোঁজে যার যাওয়া জমায়েতে,
রাষ্ট্রই দোর খুলে ভোটের তাগিদে তাকে দিয়েছিলো যেতে, 
মৌলবী পুরোহিতে হাত তুলে বলেছিলো  হবেনা কিছুই ।
সত্যিই হয়নি কিছু,
বেঁচে আছে যাবতীয় বোয়াল ও রুই,
শুধু কিছু চুনোপুঁটি নিয়ে গেছে ভাইরাসে।
কতটা পুণ্য নিয়ে গেছে ওইপাশে,
সে হিসেব এখন আর কোত্থেকে পাই,
তার চেয়ে চলো ওই মোমই জ্বালাই।


আটে সেই গ্র্যাজুয়েট ছেলে ,
ব্যর্থ ব্যবসা করে সবজির গাড়ি ঠেলে ঠেলে,
অবসন্ন অবশেষে ক্ষান্ত দিয়েছে ,
শান্তিতে ট্রেনে গলা দিয়ে মরে গিয়েছে।
সুইসাইড লেখা আছে পোস্টমর্টেমে,
হেরে গেলে জীবনের এ স্কুইড গেমে,
মৃত্যুকে ওই বলে চালানোই প্রথা।
দায় আবার কে নেবে বলো অযথা,
ওকে কেউ মরতে বলে নি তো।
একখানা মোম পাক সেই শিক্ষিত।


নয়ে থাক সেই ক্লাস ন’য়ের কিশোরী, 
স্মার্টফোন নেই বলে শিক্ষার থেকে তার দো গজ কি দূরি,
চাষার মেধাবী মেয়ে পারেনি সইতে।
ওড়না দিব্যি পারে গোটা শরীরের ভার বইতে, 
কতভাবে কতবার এইদেশে কন্যারা সেটা জেনে যায় ।
সে জ্ঞান জ্বলতে থাক মোমের শিখায়।


দশে থাক বন্ধু বা প্রিয়জন কোনো।
কাউকে হারায়নি,এইদেশে নেই একজনও,
যদি বা থাকেও কোথাও সেই সৌভাগ্যবান,
পরিচিত মহলে পায় নি সে স্থান।
অসময়ে চলে গেছে এরকম প্রিয়মুখ ফিরুক এই প্রাকদেওয়ালিতে। অশ্রুর ফোঁটাগুলো বাধা না দাঁড়ায় হয়ে বাতি জ্বেলে দিতে।


এগারোতে প্রিয় আইডল।
গান নাচ অভিনয় সাহিত্যে বিজ্ঞানে ভূপতিত মহীরুহদল,
যাদের যাওয়াতে জানি থিতু হয়ে বসেছে আঁধার,
জাগরুক হোক শোক তবুও আবার।
এসো কথা দিই ওই মোমের শিখাকে,
স্মরণে ও শরণে মনে রাখবো তাঁকে।


দ্বাদশও ভূতই বটে, তবে সে মানুষ নয়।
ওপরে উঠতে লোকে যেই দিক চায়,
মারী ও রাষ্ট্র মিলে কুড়ুল মেরেছে দিয়ে সেই শিক্ষায়।
উপায় হয়নি ভাবা চালাবার স্কুল,
প্রজন্মে থেকে যাবে সেই মহাভুল,
মারী যদি আরো থাকে কিছু কাল,
স্কুল তবে  মিড ডেতে দেওয়া চালডাল,
সব খুলে শুধু স্কুলে তালা দেওয়া হলো।
আমাদের করনীয় আর কিছু নেই, শুধু ওই মোমবাতি জ্বালো।


আনলাকি থার্টিনে সেকুলারিজম। যদিও সে বহুকাল মৃত,
তবুও শবের গন্ধ এর আগে নাক জুড়ে এত আসেনি তো।
সেই তবলিগি থেকে বিভাজন শুরু, তারপর আড়ে ও বহরে,
বেড়েই চলেছে সেটা। রাজনীতি সে আগুন পৌঁছেছে ঘরে।
করোনা যদিও  বিভেদ করেনি কোনো হিঁদু মুসলিমে,
তবুও তা দিয়ে দিয়ে সে ঘোড়ার ডিমে,
সেকুলার পরিচয় লুকাচ্ছে ভারত আজ ভারী লজ্জাতে।
সে ভূতের শ্রাদ্ধটা এইবারে হয়ে যাক মোমবাতি হাতে।


চোদ্দতে থাক সেই ভূত, যে ছিলো বহুকাল পড়েইনি চোখে,
আজ তার শেষ স্বীকৃত। একখানা মোম দাও গণতন্ত্রকে।
উঠো না রে রে করে, জানি ভোট দাও,
সংবিধানের নামে এখনো কসম খাও,
তবুও বেছেছো শেষ কবে বলো ব্যক্তিকে?
অন্ধের মতো ছাপ দিচ্ছো প্রতীকে।
জনগণমন থেকে বহুকাল ছিন্ন রাজারা ,
সব দলে গিজগিজ পাজিদের পা-ঝাড়া,
সেসব স্বীকার করি কজন আর বলো! 
ছেড়ে দাও, তার চেয়ে মোম জ্বালি চলো।


চোদ্দটা নিতান্ত নিরীহ ভূত , কে আর করবে বলো মনে।
ভোট নেই এদের দেখিয়ে। নোট নেই ক্ষতির পূরণে।


চতুর্দশীতে তবু,
এসো জ্বালি চোদ্দটা মোমবাতি তাদের স্মরণে।


আর্যতীর্থ