। দেখছেন।


মাস্টারমশাই , আপনি কিছু দেখেননি।
এই যে দেবতার আসন থেকে টেনে নামিয়ে আপনাকে সামান্য বেতনভূক কর্মচারী করে দিয়েছি,
যার কাজ বন্ধ স্কুল থেকে মিড ডে মিলের কাঁচামাল বিতরণ করা,
আমরা নিশ্চিত, এটা আপনি দেখতে পাননি।


কিচ্ছু দেখেননি আপনি , মাস্টারমশাই।
আজকে সিলেবাস থেকে কোথাও বাদ পড়ছেন রবীন্দ্রনাথ, কোথাও মহাশ্বেতা,
ঢুকে যাচ্ছে ক্ষমতায় থাকা অশিক্ষিতের ব্যক্তিগত প্রলাপ,
এইসব আপনার দেখার ক্ষমতার বাইরে
শরৎচন্দ্রের মহেশ পড়ালে আজকে আপনার নামে সমন বেরোবে মাস্টারমশাই,
আজকাল কোনো দলিত মুসলিমের  সাহস হবেনা তার ষাঁড়ের ওই নাম রাখার!
রাষ্ট্রের কোপে দুফাঁক হওয়া দেশের মাঝখানে বওয়া রক্তের নদীটা
আপনি দেখেননি মাস্টারমশাই।


এই মহামারীতে একটা জিনিস আমরা দেশ থেকে তুলে দিয়েছি মাস্টারমশাই।
সবার জন্য শিক্ষা।
যাদের ঘরে স্মার্টফোন , তাদের জন্য অনলাইন ক্লাস চলছে,
যাদের ঘরে ল্যাপটপ,
টপাটপ তারা শিখে নিচ্ছে কোডিংয়ের দুনিয়াতে সিঁড়ি বাইবার কসরতগুলো,
বহুদূরের নিস্পৃহ কোনো অ্যালগরিদম জায়গা কেড়ে নিচ্ছে মানবিক আবেগের,
এখানে কেউ বকে না, কেউ বলে না ভুল হয়েছে দশবার লেখো,
কেউ বলেনা রাজুর রচনাটা আজ সব্বাই পড়ে দেখ, কি ভালো লিখেছে!


ডিজিটাল ইন্ডিয়া হু হু করে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে রতন বাউড়ি আর রহিম শেখের বাচ্চাদের,
বীনা মুর্মু আর লতা হালদারের দিনান্তে পেটভরা ভাতই জোটে না,
তো বাচ্চাদের জন্যে স্মার্টফোন!
মাস্টারমশাই, আপনি দেখেননি ক্রমশ আপনাকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বিলুপ্তির পথে,
অ্যালগরিদম আর কোচিং কারখানাগুলোয় ছাত্রদের নাম জানার কোনো দরকার নেই,
ব্যক্তি সেখানে সমষ্টির কাছে পর্যুদস্ত।


তবুও আজও কেউ
স্টেশনের আলোতে পথশিশুদের পড়াচ্ছেন,
শবর বা ভিলদের গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছেন কোনো খ্যাপা স্বপ্নপথিক,
নদীর জল ঠেলে,
পাথুরিলা পাহাড়ি পথ ডিঙিয়ে,
ঘিঞ্জি বস্তির অনামী বাড়ি খুঁজে,
ইটভাঁটা আর ক্ষেত থেকে কৈশোর ছিনিয়ে এনে
দেশের নানা কোণায় কেউ না কেউ সাক্ষর আর স্বাক্ষরের তফাৎ চেনাচ্ছেন।
রাষ্ট্র না চাইলেও দেশ ঠিক গড়ে চলেছেন কিছু মানুষ গড়ার কারিগর।


মাস্টারমশাই , আপনি দেখেছেন , সব দেখছেন।


আর্যতীর্থ