। দেশ।


ইয়ামাগুচির শাটল ককটা নেটে আছড়ে পড়তেই লাফিয়ে উঠলো মন্টু।
জিওওওওওওও !
বলে চেঁচিয়ে উঠলো রতন কালুয়া আব্বাস।
কি হলো রে?
তড়িঘড়ি স্ট্যান্ডে অটোটা দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো বাবুলাল।
সিন্ধু জিতে গেছে!
হৈ হৈ করে উঠলো অটোওলা ছেলেগুলো।
একটু দূরেই লাইনে দাঁড়িয়ে উশখুশ করা ভিড়টা
হঠাৎ ম্যাজিকে টোকিওর ফাঁকা স্টেডিয়াম ভরানো  
উদ্বেল জনতা হয়ে গেলো।
মুখোশ পরা এক মহিলা সম্পূর্ণ অচেনা সামনের প্রৌঢ়কে বললেন,
‘ মেরি কম হেরে যাওয়াতে যা মন খারাপ হয়েছিলো!’
পেছন থেকে রঙচটা ছেঁড়া জিনসে শোভিত এক ছোকরা বলে উঠলো,
‘লাভলিনা কিন্তু জিতেছে। দীপিকা আর অতনুও!’
তাই শুনে হাততালি দিয়ে উঠলো
কাছের দোকানে  থামস আপ কিনতে আসা কিশোর কিশোরী।


ওপরের ঘটনাটির অকুস্থল কলকাতা হতে পারে
অথবা শিলিগুড়ি।
আগরতলা দুর্গাপুর বা আসানসোল
হওয়াও অসম্ভব নয়।
ভাষা ও চরিত্রগুলো পালটে দিলে,
একই দৃশ্য ঘটেছে, ঘটছে ও ঘটবে
মনিপালে, ভূবনেশ্বরে, কোটায়,
নাসিকে, পোর্টব্লেয়ার আর ইটানগরে।
জ্বরের কাছে জীবিকা খোয়ানো মানুষের দল,
উপায়বিহীন নদীতে শব বইয়ে দেওয়া মানুষের দল,
গরীব থেকে কপর্দকহীন ভিখিরি হওয়া মানুষের দল,
তাদের  সস্তার মোবাইলে দেখছে কতগুলো নিখাদ ভারতীয়
তির ছুঁড়ছে,
ঘুষি মারছে ,
ব্যাডমিন্টনে  সপাট স্ম্যাশে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিপক্ষকে।
আবছা হচ্ছে রক্তরুটি মাখা রেললাইনের  স্মৃতি,
আবছা হচ্ছে নিজের দেশে হাজার মাইল হাঁটার ক্লান্তি,
আবছা হচ্ছে অক্সিজেন না পেয়ে পরিজন হারানোর শোক,
ডেল্টার  আগামী আতংকও যেন এক নিরুপদ্রব বর্তমানের কোলে ঘুমিয়ে নিচ্ছে,
মশালের মতো দেশ জুড়ে জেগে উঠছে কিছু নাম
পি ভি সিন্ধু ..
মেরি কম..
দীপিকা কুমারী..
লাভলিনা বড়গোঁহাই..
মীরাবাই চানু..
অতনু দাস ..
বজরং পুনিয়া
প্রাদেশিক বিবাদ, ভাষাসন্ত্রাস,
দলিত-উচ্চ খুনোখুনির দুধারে  থাকা
লোকগুলোর মনে ঝলসে উঠছে একটাই নাম.. ভারতবর্ষ।


এসবের থেকে বহুদূরে
ক্রিকেটের বিনোদন কর্তারা হিসেব করে চলেছেন,
কোন বিদেশী প্লেয়ার কোন দল কত কোটিতে কিনবে..


আর্যতীর্থ