।দুই ভাই।


বিকর্ণ:


রাত পোহালেই যুদ্ধ শুরু, ডাকলে কেন আমায় ভাই?
স্বজনকাড়া ভোরের আগে , বালিশে আজ শান্তি চাই।
তুমিও জানো, আমিও জানি, কি আছে কাল ভাগ্যতে,
উপায় তো নেই, তাই চলেছি বলির জন্য ছাগ হতে।
বর্তমানের শোধরাতে ভুল , আগামী আজ মুমূর্ষু
আজকে রাতে ডাকলে কেন, বলো দাদা যুযুৎসু।


যুযুৎসু:


ধরতে গেলে তোরই সাথে ভাব আমার এ কৌরবে,
বাকিরা সব দুর্যোধনের মর্জিমাফিক দৌড়োবে।
আমার মা যে গান্ধারী নন, ভুলতে সেটা দেয়নি কেউ,
অশন বসন রাজার কুমার, তবু কুলের নই আদৌ।
তবুও আমি ছোট্ট থেকেই, হইনি সাথী অধর্মের,
আজকে কেন যোদ্ধা হয়ে দাগ নেবো সেই কলঙ্কের?


বিকর্ণ:


ভীমকে যখন বিষ খাইয়ে ডুবিয়ে দিলেন দুর্যোধন,
সত্যি বলছি প্রথম সেদিন, কু ডেকেছে আমার মন
কিশোরবেলার দুষ্টুমি নয়, পাপ ছিলো তা বড়দাদার,
আজও স্মৃতির কোণায় লেগে, কালির মতন সেই আঁধার
তুমিই দাদা তখন গিয়ে, খবর দিলে পান্ডবে,
যুক্তিমাফিক তুমিই বাঁচাও, জ্যেষ্ঠ ভীমের প্রাণ তবে।
সেদিন থেকে দেখি তোমায়, আলাদা এক সম্মানে,
আজকে রাতে দাদা হঠাৎ, এসছো কিসের সন্ধানে?


যুযুৎসু:


মানছি তিনি আমার ভ্রাতা, ধার্তরাষ্ট্র দুজন হই,
তবুও যাবো পাপের পথে, তেমন আমি পথিক নই।
ঠিক করেছি কাল সকালে, ছাড়বো আমি এই শিবির
ধর্মে যেন অটুট থাকি , তাই বেছে নিই যুধিষ্ঠির।
দ্যুতক্রীড়ার চটুল সভায় ধ্বস্ত যখন পাঞ্চালী,
স্তব্ধ সভায় তোমার কথাই ন্যায্য কথা কয় খালি।
আমি যেমন সত্যপথে, তুমিও যে তাই ভ্রাতা,
সঙ্গ ছাড়ো দুর্যোধনের, বাসুদেবই হোন ত্রাতা।
আর্জি জানাই তোমায় আমি, যাহয় হোক আজ রাতেই
স্বয়ং মাধব যে পক্ষতে, সখ্যতা হোক তার সাথেই।


বিকর্ণ:


দাদা আমার ভুল পথে যান, খোঁট রয়েছে লক্ষ্যে তাঁর,
কিন্তু ভ্রাতা, যুদ্ধে তবু থাকবো আমি পক্ষে তাঁর।
সবাই জানে হারবে কে এই স্বজনঘাতী সংগ্রামে,
স্বপ্নে দেখি একশো ভাইয়ের ভাগ্য মুছে যম নামে।
কিন্তু এতেই শিকড় আমার, সবাই এরা আমার লোক,
এদের সাথেই কাটবে জীবন, মৃত্যু যখন হবার হোক।
জানি ভীমের প্রতিজ্ঞাটাও, মরবো সবাই তাঁর হাতে,
এখন যদি ওই দলে যাই, ছল হবে তো তাঁর সাথে।
পরিবারের বিনাশ হলে, পাশে থাকাই যে ধর্ম,
কাল সকালে যুদ্ধে যাবো , কুরুর নামেই সে বর্ম।


যুযুৎসু:

তাই তবে হোক কনিষ্ঠ হে, দুজনেরই ধর্ম স্থির,
তোর ভাগে থাক দুর্যোধনই, আমার নেতা যুধিষ্ঠির।
যুদ্ধে হলে মুখোমুখি, তুলবো দুজন বাণের ঝড়,
দেখবে তখন কুরুক্ষেত্র, লড়াই কত ভয়ঙ্কর।
পরস্পরের অস্ত্র পাবে, নিজের ভাইয়ের রক্তস্বাদ
তোর সে তিরে থাকবে প্রণাম, আমার বাণে আশীর্বাদ।


আর্যতীর্থ