। দুই ফুটপাত।


লাইনটা বেশ লম্বা ছিলো, নাহোক ধরো কিলোমিটার,
মাস্কে সবাই দূরে দূরে, স্তম্ভিত এক মিছিল যেন,
দাঁড়িয়ে আছে  মুখে কুলুপ, বাক্যে ছেটায় থুতু দেদার,
সেসব থেকেই জ্বরের পোকা, বোকার মতো কথা কেন?
মাস্কে কিছু যায়না বোঝা, জিভ দিয়ে কি ঝরছে লালা,
হাজার চোখে তৃষ্ণা লেখা, খুলবে কখন সাধের দোকান,
কারবাসের দিন  পেরিয়ে, আজ খুলেছে বন্দীশালা,
ইচ্ছা সবার গুচ্ছ বোতল, আজই কিনে ফ্রিজে ঢোকান।


উল্টোদিকের ফুটপাতটায়, আরেক রকম মানুষ সারি
গোল চক্রের মধ্যে বসে, দৃষ্টি উদাস সমুখপানে,
জীর্ণ শরীর ছিন্ন বসন,  তারাও কিন্তু মুখোশধারী,
এঁরাও কথা বলেন না কেউ, শুকায় লালা খিদের টানে।
এন জি ও রা খাবার বাঁটে, তারই আশায় এঁদের আসা
রুজি গেছে লকডাউনে, রোগের ভয়ে রুটিও হাওয়া,
বাসস্থানের নেই ঠিকানা, পেটের ভেতর খিদের বাসা,
কোনোক্রমে দয়ার দানে, এক দুবেলা জোটে খাওয়া।


খুললো দুয়ার মদ দিতে আজ ,ওই ফুটপাত উঠলো জেগে,
দু চার বোতল কিংবা পেটি, যার যেরকম হপ্তা খোরাক,
সবার হাতেই কড়কড়ে নোট, দোকান খালি হচ্ছে বেগে,
লোক ভাবে আজ আবশ্যকই, মিডিয়া যতই কথা ঘোরাক।
এই ফুটপাত হচ্ছে সজাগ, ওই যে আসে ভাত দেওয়া ভ্যান
সকাল থেকে ছুঁচোর ডনে, আজের জন্য পড়বে ইতি,
হাত ধোওয়া নেই এদের কারো, সাবান কি আর এন জিও দেন
রাতের খিদেয় সান্ত্বনা দেয়, দুপুরবেলার খাওয়ার স্মৃতি।


ঘন্টা দুই বা তিনের পরে, সব শুনশান দু ফুটপাতেই,
যে যার মতো খাঁই মিটিয়ে, গেছে ফিরে নিজের ডেরায়
একলা পুলিশ দিচ্ছে টহল, তা ছাড়া আর মনিষ্যি নেই
ব্যস্ত কুকুর খাবার খোঁজে, এদিক ওদিক ঘোরাফেরায়।
মদ-ফুটপাত বললো ডেকে, ওরে ও ভাই যমজ সাথী
মানুষগুলোর রকমসকম , আজও ঠাহর হয়না বিশেষ,
একদিকে এই নেশার গুঁতো, অন্য দিকে খিদের লাথি,
নেতারা যে মাইক বাজান, এদের মাঝে কোনটা সে দেশ?
ভাত- ফুটপাত বললো হেসে, খুঁজিসনা ভাই তার ঠিকানা,
আমিও ভারত, তুইও ভারত, মধ্যে পথের লাইন টানা।


হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও, ঘুচবে না ওই তফাৎখানা..


আর্যতীর্থ