।দুর্যোধন।


    ( লক্ষণা দুর্যোধনের কন্যা, শাম্ব’র স্ত্রী।
কল্পনার সময়কাল,কুরুক্ষেত্রের সতেরো নম্বর দিন সন্ধ্যা।
কৃতজ্ঞতা: লেখক অসীম চট্টোপাধ্যায় : দুর্যোধন)


খল ছাড়া কি আমার কিছু হওয়ার ছিলো, লক্ষণা মা?
জানা কথা আমার জন্য অশ্রু চোখে শক্ত নামা,
বিদুর এবং আরো কারা বলেছিলেন জন্ম দেখেই
ধ্বংস ছাড়া আমার নাকি অন্য কিছু ভাগ্যতে নেই।


লক্ষণা রে, জন্ম থেকে না পাওয়াতে ভেঙেছে বুক
অন্ধ পিতার চোখ বাঁধা স্ত্রী, অ-দৃষ্ট তাঁর আমার এ মুখ।
কঠিন খেদে চক্ষু বাঁধার শপথ শিথিল হয়নি স্নেহে,
ঘুম ভেঙে যায় স্বপ্ন দেখে আমাকে মা দেখেন চেয়ে।


পাওয়ার ঘরে শূন্য আমার, কিশোরকালও দুঃখ ঘেরা,
অতল খাদের বার্তা নিয়ে উদয় হলো পান্ডবেরা।
জন্ম এবং বাল্যকালের পায়নি খবর হস্তিনাপুর,
নিয়তির এক অমোঘ চালে আমার থেকে স্বস্তিরা দূর।


তখন থেকেই লক্ষণা মা, ঈর্ষাময়ী আমার জগত,
আমরা বনাম ওরা হলে, ভাগ্য হারায় তার গতিপথ।
ওরাও যে ওই মাটির ছেলে, সে সত্যিটার অস্বীকারে
দ্বাপর কেন সকল যুগেই রাষ্ট্র জুড়ে হিংসা বাড়ে।


সাফাই দিতে বলছি না মা, খল তো ছিলো যুধিষ্ঠিরও
ধর্মরাজের ছদ্মবেশে ন্যায়ের ভাঙে সব প্রাচীর ও।
পাঞ্চালীকে পণ রেখেছে, পাঁচের কেনা পণ্য যেন
দেবিকা ওর নিজস্ব স্ত্রী, বাঁচিয়ে রেখে তাঁকে কেন?


বন্ধুবিহীন জীবন আমার, একটি শুধু মিত্র ছিলো
রথের চাকা তোলার সময়, অর্জুন তাঁর জীবন নিলো।
যুদ্ধ করে হারেননি কেউ, পতন ওদের চাতুরিতে,
দ্রোণ গিয়েছেন মিথ্যাকথায়, ভীষ্ম গেলেন শিখণ্ডীতে।


কাল সকালে যুদ্ধ আবার, সতেরো দিন হয়েছে পার
জানি আমি কোনদিকে নেয় আমায় টেনে ভাগ্য আমার।
সন্ধেতে তাই করতে দেখা একা এলাম শিবির থেকে
কৃষ্ণজ হোক শাম্ব , তোমায় তাঁরই কাছে গেলাম রেখে।


জন্ম থেকে খল শুনেছি , আমিও তাই হয়েছি খল,
পান্ডবরাই জয়ী যখন, আমার কথা শুনবে কে বল?
দোষ ওদেরও দোষ আমারও, মানুষ তো হয় দোষে গুনেই,
আমার যেমন সব শুভ নয়, ওদেরও কি কোনো কু নেই?


বাপের হৃদয় উপুড় করি, সাফাই দেওয়ার লক্ষ্য না মা,
চায়নি এ যুগ অন্য কিছু, তাই আমি খল লক্ষণা মা।


আর্যতীর্থ