।একটি রাজনৈতিক কবিতা।


ইনি বললেন, আমাকে নির্বাচন করো।
সাধ্যের মধ্যে খাবারে খিদে মিটবে।
পরনের কাপড়ে আভিজাত্য না থাকলেও আরাম থাকবে।
বাড়ির চাকচিক্য না থাকলেও ঘর হতে তার কোনো বাধা থাকবেনা।
ইনি বললেন, আমাকে নির্বাচন করো,
গ্যারান্টি দিচ্ছি, জীবন সহজ হবে, কিচ্ছু বাঁকবেনা।


উনি বললেন, ভোট আমাকেই দিও।
দুবেলা বিরিয়ানি, নিরামিষাশীর জন্য ঢালাও পোলাও পাবে। সহজ কিস্তিতে ঋণের ব্যবস্থা করবো,
গায়ে থাকবে ব্র্যান্ডেড পোশাক ,
ঠিকানা হবে আসমান ছোঁয়া ফ্ল্যাট,
ক্রেডিট কার্ড সব স্বপ্নকে ছোঁবে,
চাহিদার পোস্টম্যান ঠিকানাকে খুঁজে খুঁজে বাড়ি পৌঁছাবে।


ইনি বললেন,
আমাকে নেতা করলে প্রতি ঘর হবে উপাসনালয়।
ঈশ্বর হবেন  পারিবারিক, সকালে তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে বেরোবে,
রাত্রে তিনি কুশল জিজ্ঞেস করবেন।
বার্তাবিনিময়ে নিয়ম থাকবে কম, আন্তরিকতা বেশি।
শুদ্ধ আচরনের বিতন্ডায় অযথা ফোলাবেনা কেউ ধার্মিক পেশী।


উনি বললেন, আমায় নেতা করো,
তোমার ধর্মই শ্রেষ্ঠ হবে পৃথিবীতে।
আকাশ অবাক হবে উপাসনাস্থলের উচ্চতা দেখে,
সমবেত প্রার্থনায় যোগদান না করলে চাবুকের আওয়াজে মাটি কেঁপে উঠবে,
আমাকে ক্ষমতায় আনো,
দেখবে ধর্মের সাঁজোয়াগাড়ি কেমন পাড়ায় পাড়ায় ছুটবে।


ইনি বললেন, আমি পুরোভাগে থাকলে তোমাদের পরিজনরা প্রত্যক্ষ হবে।
কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে পারবে, চোখের দিকে তাকিয়ে হাসতে পারবে,
শোকে ও উৎসবে তারাই আসবে, যারা রোজকার সুখদুঃখের অংশীদার।
জীবনে সঙ্গী আর মৃত্যুতে স্মৃতি, রোজনামচায় দুটোই হবে সত্যিকার।


উনি বললেন, পরিবারের বাইরেও একটা বিশাল দুনিয়া আছে, জানো?
শুধু কটা লোকের মধ্যে জীবন আটকানো বড্ড সেকেলে। তোমায় আমি লক্ষ লোকের সান্নিধ্য দেবো,
হাজার লোকের প্রশংসা দেবো,
জীবন ভাগাভাগি করতে গেলে কাছে আসতে হবে,
এই সব যুক্তি প্রযুক্তির কাছে হেরে গেছে কবে!


ভোট হলো। আবালবৃদ্ধবনিতা বেছে নিলো বর্তমানের ভোটে আগামীর রাজা।
উনি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করলেন।
ইনি গোহারান হারলেন, বহু কেন্দ্রে লজ্জাজনকভাবে জব্দ জামানত।  
মগজের রাজ্যপাটে একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে উনি নিলেন শপথ।


রীতিমতো গণতন্ত্র মেনে, ক্রমে ক্রমে মুছে যায় ঈশ্বরের মতামত।


আর্যতীর্থ