। যুধিষ্ঠির।


যে অক্ষমতাকে তোমরা ভক্তিভরে পুণ্য বলে ডাকো,
আমি জানি তা শিকল, বস্তুত আমি সত্যের ক্রীতদাস
বেজে যায় যথারীতি মহানতা প্রচারের ঢাকও,
আমার নিভৃত প্রার্থনা চলে, ‘হে আমার জিভ, সময়ে সুযোগে যেন বোবা হয়ে যাস’


আমি মুখ খুললেই  সত্যবচন. মিথ্যে বলতে আমি পারিনা কিছুতে।
মিছিমিছি বলতে পারিনি মা’কে, ‘দ্রৌপদী পছন্দ হয়নি আমার,
এ আমার ভাদ্রবধূ হোক শুধু’!  ও আগুন দেখে মন জ্বলে গেলো বিদ্যুতে,
আজীবন বয়ে গেছি কৃষ্ণার অবহেলা,পতি হয়ে পত্নীর বিতৃষ্ণাভার।


দ্যুতক্রীড়ার দূতকে আমি বলতে পারিনি, ‘ পাশাখেলা আমার পছন্দ নয় মোটে’
যদিও সে আমন্ত্রণে প্রতি অক্ষর থেকে শকুনির পাতা ফাঁদ দিচ্ছিলো উঁকি,
যুক্তি বুদ্ধি আর কূটনীতি কৌশল মুখ থুবড়িয়ে পড়ে সত্যহোঁচটে,
অসহায় সততায় ফলাফল আগে জেনে সবকিছু কেড়ে নেওয়া শঠতার হই মুখোমুখি।


অথচ এ  মিছেকথা ‘ ইতি গজ’ রূপ নিলো পরে, আচার্য ছাড়লেন হাতিয়ার তার,
তাবত বিশ্বাস আমার ওপর রেখে ঠকলেন তিনি। গুরু নন , তিনি যে শত্রুসেনাপতি!
আগেই  মিথ্যে বলে বাঁচলে যুদ্ধ থেকে, পাপ লাগতো না তবে গুরুহত্যার,
মরে যদি যেতামই সেদিন , ইতিহাসে হতো তবে কতটুকু ক্ষতি?


মহাপ্রস্থানের পথে, কৃষ্ণা ও চারভাই শেষবার সান্ত্বনা চেয়েছিলো পড়ে যেতে যেতে
ওখানে বলাই যেতো কত ওরা প্রিয়, অমোঘ পতনের হেতু আমারও অজ্ঞাত
অন্তিম সময়েও প্রবল তিক্ত ঢালে ঘাড়ের ওপরে চাপা সত্যের প্রেতে,
আজীবন সম্মানে আমার সমস্ত ত্রুটি ঢেকেছিলো ওরা, একবারও আমি সে সত্য বলিনা তো!


ধর্মকে ভুলে কিছু মিছেকথা বলে দিলে আমি, হয়তো কুরুক্ষেত্র  
প্রারম্ভে আটকাতো...


আর্যতীর্থ