( এ কবিতাটা পড়ার আগে কাজী নজরুলের ‘আমার কৈফিয়ৎ’ পড়া প্রয়োজন ।সেই অমর কবিতার বর্তমান প্রেক্ষাপটে অক্ষম অনুকরণ)


                  । কৈফিয়তের পরে।


অতীতকালের ছবি তুমি নও, কালিমা রয়েছে সেই সবই,
সমকাল জুড়ে  ঝগড়া চলেছে পুরুত বনাম মৌলবী।
এখনো চাঁদেরা এদেশে আলাদা,
জেহাদ আর লাভ হাইফেনে বাঁধা
ধর্ম নিংড়ে রস চুষে খায় রাজনীতি করা মৌ লোভী,
অভাগার শুধু সম্বল তুমি আর স্থির জ্বলা ওই রবি।


বিরুদ্ধমতে কিছু লেখা হলে এখনো কবিরা যায় জেলে
ছাড়াতে পারে না আইনের প্যাঁচে পরিজন আজও হায় বেলে।
যে আগুন ছিলো তোমার লেখাতে,
মশালে তা যদি জ্বলে কারো হাতে,
অশ্বেত প্রভুরা সদা তৎপর ,দ্রোহী সে দেশের রায় মেলে,
পোষ্য আই টি মিডিয়াতে এসে যত বিষ গায়ে যায় ঢেলে।


শ্যামাসঙ্গীত এযুগে লিখলে শুরু হয়ে যেতো ধেই নাচা,
পিঁজরার চাবি দিয়েছিলে বটে, এখনো খোলেনি সেই খাঁচা।
এখনো হিন্দু আর ইসলামী
মানুষভাগের করে ভণ্ডামি,
জাত জালিয়াত বজ্জাতি করে মানুষকে বলে জান বাঁচা,
দাঙ্গায় যার হাতে সুতো থাকে, অনেক উঁচুতে তার মাচা।


মারী এসে গিয়ে নিয়মে পেঁচিয়ে দিলো গরীবের ভাত মেরে
দেশ ভালো আছে বলে তবু যান মহান নেতারা হাত নেড়ে,
কাণ্ডারী বলে কেউ নেই আর,
ঢেউয়ের দাপটে দেশে হাহাকার,
অসুখের দায় জনতাকে দিয়ে রাষ্ট্র ফেলেন হাত ঝেড়ে,
জ্বর আর অভাব বসেছে জাঁকিয়ে, সুখ চেটে খায় পাত পেড়ে।


রাজার প্রাসাদে কোষাগার খোলে ভ্যাক্সিনে করে কঞ্জুসি,
আগামীতে আরো অশনি হানার সংকেত দেয় ক্রন্দসী
বুক ফাঁকা করে গেলো কত পাখি
এই শোক কবি কার কাছে রাখি
যাপন খুবলে আরো ক্ষত করে রোজ বিষাদের খোক্কুসি,
সেনসেক্স কার্ভ তবুও ঊর্ধ্বে , ধনী লোকেদের মন খুশি।


রাষ্ট্রের ভাষা না লিখলে আজ সে কলম দেশ-বিদ্বেষী,
তোমাকেও কাজী হয়তো বা কেউ বলে দিতে পারে ভিনদেশী।
দে গরুর গা ধুইয়ে চেঁচালে,
ঝটিতে পড়বে ভীষণ ক্যাচালে,
ইচ্ছামাফিক এদেশে এখন যায় না গো গাওয়া গীত বেশি,
ভাবাবেগে ঘা অভিযোগে আসে দ্রুত গ্রেপ্তারি নির্দেশই।


দেশের ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি, কুকুর যেমন হাড় পিছু,
জিতে যায় যারা, জনতার  হিতে খরচ করেনা আর কিছু।
বলো বীর বলে দিলে হুংকার
পেছনে পেয়াদা লেগে যাবে তার
নাগরিক জানে সেই বেঁচে থাকে যার আজীবন ঘাড় নিচু,
উন্নয়নের বৃক্ষের পায়ে তারা স্রেফ গুঁড়ো সার কিছু।


মন্দিরও আজ ঘোলাজল মেপে ভোটার ধরার ফন্দী রে,
লক্ষ্মণরেখা বনেছে পরিখা, ধর্ম দিয়েছে গণ্ডী রে।
এসময়ে কবি তোমার রচনা,
সাম্যের বাণী দুগ্ধে গো-চোনা
সংবিধানের নতুন বিধানও নয় সেকুলারগন্ধী রে,
জাহাজ দুলছে, জানি না আগামী আছড়ে ফেলবে কোন তীরে।


হিংসা যখন বাড়ায় ব্যাপ্তি ফেক নিউজের ভুলভালে,
এখনো রয়েছে কিছু আধাখ্যাপা, লিখছে কবিতা ভুল চালে,
তারা বলে যায় খুঁজে দেখো মূল,
রয়েছেন  বসে রবি নজরুল,
তাঁদের আলোতে পথ খুঁজে নিও বিভেদ আঁধার উসকালে,
এখনই তোমার প্রয়োজন কাজী, জন্ম নিয়েছো ভুল কালে।


বিভাজন বাঘ নরঘাতী আজ ভোটশিকারের স্বাদ পেয়ে,
কে জানে কোথায় তল পাবো শেষে দেশ নামে যেই খাদ বেয়ে
বদলাতে চায় কারা ইতিহাস,
সত্যের ছোঁয়া নেই কিছু খাস,
যেন বা বামন  ক্ষমতার ভ্রমে বসে হাতে তার চাঁদ চেয়ে,
হয়তো ভেবেছে এত কোটি লোক ব্যা করে ডাকা চারপেয়ে।


চারিদিকে লোক হামাগুড়ি দেয়, শিরদাঁড়া খায় ভয়ের ঘুণ,
তোমার কবিতা হয়নি আবছা, এমনই তাদের জ্যোতির গুণ
এই মনে হয় কাল যেন লেখা
তুমি সাথে হলে কই আর একা
ক্লান্ত যোদ্ধা তোমার স্মরণে ফের ভরে নেয় কথার তূণ,
তুমি আছো বলে শীতল হয়নি এখনো শরীরে কারোর খুন।


অতীতকালের কবি তুমি নও, বর্তমানেই তোমার বাস,
তোমারই অশ্রু আমার দুচোখে নদী বয়ে যায় যখন লাশ।
অন্ধ সময়ে জমে রোজ ভুল
সমকালে এসো কাজী নজরুল,
নাগরিক হতে চাইছি সবাই  রাষ্ট্র যখন চাইছে দাস,
আর যে সয়না বশ্যতা চেয়ে আইনের ছলে ছড়ানো ত্রাস।


জানিনা হে কাজী, এ কবির শেষ কারাগারে নাকি বন্দুকে,
দেশ ভালো নেই, অমল কবিতা লিখে যাবো বলো কোন মুখে!
এখনো তুমিই, ওগো দুখু মিঁয়া
বিপরীত স্রোতে কথা-জাগানিয়া,
বিদ্রোহী হতে তুমিই প্রেরণা দেশ ধরে রেখে এই বুকে,
কখনো হতাশা ধরলে হে কাজী তোমার নামেই দিই রুখে।


বর্তমানের কবি হয়ে তুমি এখনো বেড়াও  দীপ জ্বেলে
পরোয়া করিনা তাই তো এ দ্রোহ ক্ষমতাবানেরা টের পেলে।
এ কলম স্রেফ নকলনবিশ, নতুন কিছুই লেখে না খাস,
শিরদাঁড়া হোক তোমার মতন, যতদিন এই শরীরে বাস।


সাম্যবাদের মন্ত্রে জ্বলেছি তুচ্ছ লিখিয়ে দেশের দাস।


আর্যতীর্থ