। মূর্তি।


মূর্তিটা সব দেখে ।
আকাশে হেলান দিয়ে নিচে , বহু নিচে খুদে খুদে মানুষের কীর্তিকলাপ,
নড়বড়ে স্তম্ভতে স্বপ্নের রাষ্ট্রের সব অপলাপ,
সবকিছু সে দেখতে পায় ,
ছলাৎ ছলাৎ করে সময়কে সাথে করে নদী বয়ে যায়।


বহুদূর দিল্লীর থেকে ,
বাতাস দুফাঁক করে মূর্তির কানে আসে লাশ বনবার আগে জীবিতের শেষ আর্তনাদ।
নাকে আসে কটু ঘরপোড়া গন্ধ,
মানুষে মানুষ কাটে যেন উন্মাদ,
বহু ওপরের থেকে এক চিলতে নরক নজরে আসে।
মূর্তি চেঁচাতে যায়, বাপুজীইইই.. আবার নোয়াখালি... কলকাতা... বিহার.. আমি আছি আপনার পাশে,
থামাতে হবে এই আত্মবিনাশ..
আহ জওহর, আজাদ, খানসাহেব,
দেখো দেখো এখনো লড়ছে ওরা ,
ধর্মের অজুহাতে মানুষের হত্যাতে কি যে উল্লাস..
মূর্তি চেঁচাতে যায় , তারপরে বোঝে কেউ শোনবার নেই।
এ শোক বইতে হবে একলা তাকেই।


মূর্তি দেখতে পায় অগণিত কারা চলে পথে প্রান্তরে।
জীবিকা নিহত বলে জীবন বোঁচকা বেঁধে কারা যেন হেঁটে বাড়ি ফেরে।
দুহাতে ক্লান্ত শিশু, পাশে আরো হাক্লান্ত বউ নিয়ে পুরুষ ফিরছে তার গ্রামে,
সাইকেলে বাপ নিয়ে কন্যা সভয়ে দেখে পথে সাঁঝ নামে,
কাদের অবসন্ন দেহ ছিন্নভিন্ন করে বুকের ওপর দিয়ে গেলো রেলগাড়ি,
মাঝপথে বন্ধুকে ছেড়ে না ফেরার দেশে দিলো তার দোস্ত পাড়ি,
মূর্তি অবাক হয়ে দেখে ।
আকাশকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করে বসে সূর্যকে সে,
পার্টিশন এখনো কি এমন জ্বলন্ত আছে  আমার স্বদেশে?
সূর্য পাঠিয়ে তাকে গোধূলির আলো,
অস্তে যাওয়ার আগে আস্তে বোঝালো,
তুমি তো অতীতস্মৃতি, মূলের মানুষটাকে ভুল উপহার,
দূর থেকে দেখা ছাড়া কী আছে তোমার?


মূর্তি তবুও দেখে।
যেদিকে দুচোখ যায়, শ্মশানে শ্মশানে ভরে জ্বলন্ত লাশ,
মূর্তি কঁকিয়ে ওঠে... জওহর, রাজেন্দ্র কই, কোথায় সুভাষ,
এখনো কি এই দেশ জনতার নয়?
ভীমরাও , কিছু কি লিখতে বাকি আছে সংবিধানে?
ওদিকে প্রাসাদ দেখি এইদিকে শব, 
গণতন্ত্রের তবে আছে কোন মানে?
এত শব,
এত লোকে কাতরায় শ্বাসবায়ু না পেয়ে আজ চারদিকে,
তবু ওরা এক নয়, মারামারি চালু আছে প্রতীকে প্রতীকে!
এ কোন স্বদেশ যেখানে চিকিৎসা কম আর ধর্মের আচারের  এত বাড়াবাড়ি ?
এরই মাঝে খুনোখুনি, ভোট শেষে ভাঙচুর বিরোধীর বাড়ি,
জ্বরের শবের সাথে মিশে যায় ভোটজয়ে উল্লাসে বলি হওয়া মৃত! ...বাপুজীইইইই.. জওহর.. আজাদ.. সুভাষ...খানসাহেব...
নামবো পথে আমরা আবার,
স্বাধীনতা এই দেশে আজও আসেনি তো।


মূর্তি চেঁচাতে গিয়ে বারবার বোঝে,
এই দেশে কথা বলা যায়না সহজে।
তার শুধু একটাই কাজ, নিচে যা চলছে সেটা অসহায় দেখা।


আকাশ মাথায় নিয়ে মূর্তি দাঁড়িয়ে থাকে।
গণতন্ত্রের মতো একেবারে একা।


আর্যতীর্থ