। নামকরন।


বাড়ির পাশের কৃষ্ণচূড়াটাকে যদি পিঙ্কিদিদি বলে ডাকি ,
কেমন হয়?
 একটু এগোলেই একটা সিড়িঙ্গে বছরবিউনি শিউলি গাছ,
ওকে যদি বাসন্তীমাসি বলি?
চায়ের দোকানের গা ঘেঁষে ওঠা পলাশগাছটাকে
লালমোহনবাবু ডাকলে তুমি কি পাগল ভাববে?
আসলে, বরাবর দেখে আসছি,
নামহীন হলে কোনো আবেগ থাকেনা।
পাড়ার খোঁড়া কালো  কুকুরটাকে যারা ভুলু নামে চেনে,
তারাই তাকে বিস্কুট কিনে দেয়,
গলিতে আগন্তুক কোনো ওলা বা বাইকের কাছে
সে মূর্তিমান আপদ।


গাছেদের আমরা গাছ বলেই চিনি।
মোড়ের মাথার বড় অশ্বত্থ,
বাজারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা একলা রাধাচূড়া
বা মর্নিং ওয়াকে গিয়ে চেরা পাতা দেখে চেনা কাঞ্চনগাছটা,
রোজ দেখা হকার বা ভিখিরির মতো
রুটিনের মুখচেনা শুধু,
অনেক চেষ্টা করেও যেমন মনে করতে পারো না
ভিখিরিটার কোন পা খোঁড়া
বা হকারের ঠিক কিসের দোকান,
তেমনি ওই গাছগুলোর কেউ ডাল কাটলে
অথবা পাতার রঙ বদলালে মনে দাগ কাটে না।
এবার ধরো, ওই অশ্বত্থের নাম মনিকাকু,
রাধাচূড়াটার নাম সন্দীপ
আর কাঞ্চনকে তুমি রুনা বৌদি বলে ডাকো,
তাহলে কি ওদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়
কেমন আছো বলতে দুদণ্ড দাঁড়াবে না?


হয়তো তোমার বাগান করার সখ ।
বীজ থেকে বা চারা থেকে
শীতকালে বড় হয় পিটুনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা ডালিয়া গাঁদারা,
বর্ষায় রঙবেরঙের দোপাটি।
ধরো স্কুলের বাচ্চাদের মতো ওদের এক একটা নাম থাকলো,
আর তুমি সকালের জল দেওয়ার সময় রোলকল করতে থাকলে,
আত্রেয়ী, অরিত্র, সৌরদীপ, সংহিতা …
তাহলে কি তোমার শুধুই ফুলের জন্য অপেক্ষা থাকবে?
তুমি কি দেখবে না, আত্রেয়ী আজ একটু মুষড়ে পড়েছে,
কিংবা সৌরদীপের কটা পাতায় পোকায় কাটা দাগ?
তারও চেয়ে বড় কথা,  
ঋতু শেষ হয়ে গেলে যখন ওরা বিদায় নেবে একে একে,
তোমাকেও  কি ভীষণ মনখারাপে ধরবে না?


জানি পাগল ভাবছো , নিদেনপক্ষে খ্যাপাটে তো বটেই।
তোমরা গাছেদের বন্ধু বলো,
সবুজরক্ষার জন্য বৃক্ষরোপন করো,
শুধু নাম দিলেই আপত্তি কেন গা?
আসলে নাম দিলে তখন একরাশ দায়িত্ব এসে পড়ে,
তখন তো গাছের ডাল কাটা নয়,
লালমোহনবাবুর গায়ে হাত তুলেছে কেউ,
কিংবা রুনাবৌদিকে কেউ অশ্লীল ইঙ্গিত করেছে।


তুমি জানো,
এই ভরা শীতেও বাসন্তী মাসীর তলায়
বেশ কটা শিউলি পড়েছিলো কাল?
আমি কুড়াতে কুড়াতে আপনমনেই ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
‘থ্যাংক ইউ’


কি জানি শুনলো কিনা কেউ,
তবে ভুলোটা কিন্তু প্রবল ল্যাজ নাড়াচ্ছিলো বন্ধ করে খেঁকুরে ঘেউ,
আর সেটা ওই বাসন্তীর দিকেই তাকিয়ে।


বিশ্বাস না হয় , কালকে এ পাড়া ঢুকে দেখে এসো গিয়ে।


আর্যতীর্থ