।পদবী।


‘এই যে দাঁড়াও। তোমাকে প্রায়শ দেখি এদিকে ওদিকে যাও।
সকলে তোমার সাথে খানিক দাঁড়িয়ে দেখি সময় কাটায়।
আমারও লাগছে যেন খুব চেনা চেনা..
আজ তাই ডেকেছি তোমাকে, পরিচয় না দিয়ে যাওয়া চলবেনা।’


‘সকলের চেনা বটে, ফেরি করে ফিরি। মানে ফেরিওয়ালা।
বেশভূষা দেখে ধনী ভেবে বসে লোকে, আদতে ভিখিরি।’


‘ফেরিওয়ালা? হাঁকতে দেখিনা তো তোমায় কখনো? ঝাঁকাতে কি আছে?
হাঁকুপাকু করে লোক কি পেতে ভিড় করে আনাচে কানাচে? কেউ হেসে গলে যায় , কেউ কেঁদে চলে যায়, ছ্যা ছ্যা করে ফেলে দিয়ে ফের ফিরে আসে,
কি বেচো হাতিঘোড়া, জনতা লেপটে যাতে ঘোরে আশেপাশে?’


‘ঝাঁকায় স্বপ্ন থাকে, নানা ভুল ঠিক, কিছু তার মাটিছোঁয়া, বাকিটা অলীক।
আশাদের মই আছে, হতাশার ফাঁস, পাগলামি, খুনসুটি, দীর্ঘশ্বাসকে ছেঁচে পাওয়া নির্যাস।
আরো কত কি যে আছে আমিও কি জানি, যে যেমন দাম দেয় তেমনটা আনি।’


‘কি বেচো সেটা তুমি নিজেই জানোনা? তাহলে তো এইসব বৃথা আলোচনা..
কেউ দেখি তোমাকে পথে পথে খোঁজে,কেউ নাম শুনলেই কানে তুলো গোঁজে।
কেউ বলে ঠকাও না , যেমন মূল্য দেয় সেরকমই পেয়ে থাকে ক্রেতা, আবার শুনেছি তুমি ধূর্ত চালাকি করা পাকা অভিনেতা।’


‘আমি অত জানিবুঝি নাকি? যার যা চাহিদা হয় আমার সাধ্যমতো তাই দিয়ে থাকি ।
চালাকির চোটে কেউ আমাকে ঠকালে, কিংবা অচল সিকি দিয়ে চমকালে,
সেটাও তো মেনে নিই, মেনে নিতে হয়,
শতাংশে একশোই ভালো ডিল পেয়ে যাওয়া বাস্তব নয়।’


‘তবুও তোমাকে খুব চেনা চেনা লাগে, মোলাকাত কোনোকালে হয়েছে কি আগে?
এই দেখো, কত কথা, নামটা করিনি ভুলে এখনো জিজ্ঞাসা..’


‘আসলে তো ফেরিওয়ালা , তাই গোলমাল। পোশাকি নামটা চেনো.. আমি ভালোবাসা।’


‘ভালোবাসা?দাঁড়াও, দাঁড়াও, ওইজন্যই লাগে চেনা চেনা এত, চারদিকে তোমারই তো পোস্টার, গল্পে ও কবিতায় তুমি বিখ্যাত।
পদবীটা কি যেন, বলেছিলো কানে কানে যুগের বাতাস..
এই তো পড়েছে মনে পুরো নামখানা, ‘ ভালোবাসা দাস’’


‘ভুল! ভুল! একই ভুল কেন করো তোমরা বলো তো! কোনোকালে পদবীতে দাস লিখি না তো, তবু বারবার, আমার নামের পিছে দাস এসে লাগে, মনে হয় সব ভাঙি মাঝে মাঝে রাগে!’


‘দাস নয়? তাই তো বলে থাকে লোক গলাবাজি করে, ভুল জানি পদবী কি এতদিন ধরে?
তাহলে সত্যি কি? কোন নাম ঠিক বলো, সেটাকেই বলা তবে করি অভ্যাস..’


‘আর কত চিল্লিয়ে বলবো বলো তো, নামটা আমার। শুনতেই চাও যদি বলছি আবার, দাস নই কোনো কালে, আমি বিশ্বাস।
ভালোবাসা বিশ্বাস, এটা পুরো নাম।
দেরী হয়ে গেছে খুব, মেলা কাজ পড়ে, এবারে বিদায় দাও, আমি চললাম!’


আর্যতীর্থ