। সেই মেয়েটা।


খেলা বেশ মজার কি এ , দুইবার জ্বালিয়ে দিয়ে
কলিযুগে মূর্তি হয়ে,  দাঁড়ালেন পার্শ্বে নিয়ে।
অপরাধ কি ছিলো তার, কেন রাজা, হে অবতার,
অপারগ সত্যি দেখায় ও মিছের জাল পেরিয়ে?


সে যখন ছোট্ট কুঁড়ি, টুকটুকে রাজকুমারী,
আলাপে  খুব আনাড়ি, নিভৃতে প্রাসাদচারী,
আপনিও প্রেমিক তখন, বধূবিনে মন উচাটন
তাকে নিয়ে চোদ্দো বছর, সহজেই বনে পাড়ি।


যেই না গেলেন ঠকে ,মারীচের মায়ার ছকে
অমনিই পালটে গেলেন, হঠাৎই এক ঝলকে।
যেমনটি যদু মধু,   বৌকেই দোষে শুধু,
পুরুষের তেমন চোখেই, অপরাধী বানান ওকে।


কেন ও বায়না করে ,   বলে আনো হরিণ ধরে
এরকম নানান নালিশ, ফুটছিলো কি ভেতরে?
কেন ও গন্ডীরেখা,    ডিঙালো একা একা,
সাতপাঁচ হয়তো ভাবেন, মনে তাই আগুন ঘোরে।


ও আগুন প্রেম ছিলোনা, নিকষিত হেম ছিলো না,
চোখে কি বইয়েছিলেন, একটুও  অশ্রু লোনা?
আসলে ক্ষত্রিয় তো, অভিমানে গভীর ক্ষত,
যেন কোন দুষ্টুলোকে, কেড়েছে তার খিলোনা।


সুতরাং যুদ্ধ হলো, শেষে যেই শত্রু মোলো,
আপনার মাথায় ঘোরে  বিস্তর গন্ডগোলও।
এতদিন পরপুরুষ, রূপে কি রেখেছে হুঁস,
সন্দেহ সব পুরুষের, ভগবান তো কি হলো?


সেসময় প্রজা কোথায়, যাদেরকে দোষ দেওয়া যায়?
প্রভু তাঁর বউকে পোড়ান, ভক্তরা আগুন জ্বালায়।
তবু কি ভাগ্য বলো, মেয়েটা বেঁচেই গেলো,
তবু তো সন্দেহ খুব, সতী কি বন্দীশালায়?


যেই না বললো প্রজা, আঙুলও উঠলো সোজা,
অবতার বলেন নারী, এখনই দূর হয়ে যা।
ভগবান ঠকেন নিজে, দুখিনী গর্ভিনী যে,
জানলে হয়তো সে মেয়ে, হতো না এমন বোঝা।


ভাগ্যিস যমজ ছেলে ,এসেছিলো দুঃখী কোলে
বোঝা তো যাচ্ছে ভালোই, কি হতো কন্যা এলে।
আহা সে ছেলের মা যে, ডাক ফের সভার মাঝে,
কিন্তু সন্দেহ বিষ , তার কি ছুটি মেলে?


সুতরাং আবার জ্বলো, আগুনে পুড়বে চলো,
পুড়লো না পোঁতা হলো, হে অতীত কথা বলো।
যাকগে শেষ হয়েছে, বাঁচা গেলো বেশ হয়েছে,
মেয়েটার সারা জীবন, ছিলো বড় অগোছালো।


এসে এই কলির শেষে, কত কি ঘটছে দেশে
মেয়েটা রাজার পাশে, মূর্তিতে রাণীর বেশে।
পোড়াদাগ আর কি জ্বালায়, ঢাকা সে পুজোর মালায়
যে পোড়ায় তারই সাথে, দাঁড়িয়ে স্মিত হেসে।


কে জানে ওই হাসিতে, কতখানি কান্না মেশে...


আর্যতীর্থ