। সূর্যের সন্তান।


জন্মভূমি যখন তাকে তাড়িয়ে দিলো, তখন সে কোন একটুকুনি।
অবশ্য তার ভিটের বালাই কোনোকালেই তেমনটি নেই,
বাপ পিতেমো, তস্য পিতা, ভাত জোটাতেই সুয্যি পাটে,
আবার ঘরের বিলাসিতা!
এক শুধু ওই জন্মখানাই আগের কালের ক্রীতদাসের ছাপ্পা মাফিক আটকে গেলো শরীর জুড়ে,
মানুষরা সব দেশজ হয় ,অনন্তকাল বিনভিটেতেও।
কিন্তু কারা ভীষণ রোষে , বিনা দোষে এক কাপড়ে উপড়ে তাকে সীমান্তপার পাঠিয়ে দিলো,
যেই নদীটা দেশ চেনেনি, কাঁটাতারের তুচ্ছতাকে অবলীলায় পাশ কাটিয়ে বয়ে গেছে অন্য দেশে,
তারই জলে ভাসিয়ে দিলো।


আনমুলুকে ঢুকে ছোটে এদিক ওদিক, স্রোত যেখানে ফেলছে নিয়ে সেখান গিয়েই ফাইফরমাস,
ছুটকো কাজে জীবনযাপন, আপন বলে কেউ ছিলো না,
এক শুধু ওই সূর্যটা যা দেশের মতোই ডাকতো তাকে রোজ সকালে।
সর্বহারা মনে মনে তাই মেনে নেয় আকাশচরা ওই তারাকেই বাবা বলে।
এদিকে তার বন্ধু গজায়, খানিক ভালো, খানিক কালো, মোটামুটি শিকড় গজায় ভিনমাটিতে।
ঝগড়াকালে পড়শি তবু ছাড়তো কি আর, ভিনদেশি সে, আসতো উঠে সব গালিতে,
এমন করেই চলছিলো দিন,
দীন সে নি-মূল, ভিনমাটিতেও ভিত খুঁজে পায় ক্রমে ক্রমে।


কিন্তু ওরা ছিনিয়ে নিলো,
নতুন দেশের রাজপেয়াদা দেখতে এসে কে নাগরিক,
ছিনিয়ে নিলো রক্ষাকবচ, যেটুক নথি জুটেছিলো দুর্যোধনের বন্ধুকৃপায়।
তুচ্ছ হলো জমির কাগজ,
যে কুন্ডলে আটকে ছিলো থানা পুলিশ, সবই গেলো।
জন্ম কোথায়, কে ছিলো মা, কিচ্ছুটি না বলতে পেরে ভ্যাবলা চেঁচায়
সুয্যিঠাকুর পিতা আমার,
ছোট্ট থেকে এক তো ওঁকেই দেখছি আছেন মাথার ওপর,
কি এ দেশে, কি ওদেশে।
ওরা হাসে, ঠারেঠোরে গা টিপে কয় ‘দেখ দিকিনি, বিন ঠিকানা সুয্যিছানা!’


  তারপরে খুব যুদ্ধ হলো।
কাদের শিকড় বেশি গভীর , হিসেব নিয়ে ভীষণ গোলে,
মাটি হলো রক্তকাদা, ঘর ভরে যায় কান্নারোলে।
দেওয়ালে যার পিঠ ঠেকেছে, যুদ্ধটা তার বাধ্যবাধক,
ভাবলো সেও, লড়েই দেখি, কপালে যা আছে তা হোক।
কিন্তু সে আর লড়বে কি হে, নথির ঝুলি সবই ফাঁকা,
শুরুর আগে সে হেরেছে,
অস্ত্র হাতে তোলার আগেই বসে গেলো রথের চাকা।


সূর্য দেখে ওপর থেকে, তার শুধু কাজ তাকিয়ে থাকা..


আর্যতীর্থ