। টুকরে টুকরে।


ভারতবর্ষ একটা নয়, দুটো।
একটা গরীবের একটা বিত্তবানের।
প্রথমটায় ক্রমাগত তাড়না কাল কি খাবে.. জবাবে কখনো আধপেটা হ্যাঁ কখনো নিষ্ফলা না ।
দ্বিতীয়টাতেও জিজ্ঞাসা একই, কাল কী খাবে?
জবাবে মোগলাই না চাইনিজ,
ঘরে না বাইরে, পার্টি না ক্যান্ডললাইট, এম সি কিউয়ের ছড়াছড়ি।
দরিদ্রের ভারতবর্ষে ভাতের বিনিময়ে সব পাওয়া যায়,
দেহ, ভোট, বিরূপ সাক্ষ্য এবং জামিনবিহীন হাজতবাস,
আর ধনীর ভারতবর্ষে ভাত ছড়িয়ে সব কাক জোগাড় করা যায়, মিডিয়া, পুলিশ, বিচার, বুদ্ধিজীবি, মায় মন্ত্রী পর্যন্ত!


উঁহু হলো না।
ভারতবর্ষ দুটো নয়, চারটে।
তিননম্বরটা সংখ্যাগুরুর , চার সংখ্যালঘুর।
প্রথম দেশে  হাজার বছরের বঞ্চনার গুমরানো ক্রোধ,
অন্যটায় জন্ম থেকে জানা আশ্রয়ে অনাথ হবার ভয়।
একদিকে   প্রাপ্য স্বদেশ’এর জবরদখল হওয়ার ভাইরাল ভিডিও,
আর কি আশ্চর্য, অন্যটাতেও ঠিক সেটাই ,
শুধু সম্পূর্ণ বিপরীত আঙ্গিকে।
আর দুটো দেশের মধ্যে কাটা পরিখায় ভাসে অসংখ্য অকালমৃত ও ধর্ষিতার লাশ,
যাদের নাম জানা যায় শুধু দাঙ্গা আর ভোটের সময়।
আর অদ্ভুতভাবে , তাদের নিরানব্বই দশমিক নয় ভাগ, একনম্বর ভারতের বাসিন্দা।


তাহলে চারটে দেশ? উঁহু হলো না।
আসলে ছয়টা। পাঁচ দলিতের ভারতবর্ষ আর ছয় উচ্চবর্ণের ভারতবর্ষ।
এদের হাঁড়ি আলাদা, বাড়ি আলাদা,  নারী আলাদা..
থুড়ি পাঁচনম্বরের মেয়েরা একেবারে আলাদা নয়,
প্রায়শই ছয়নম্বরের গণধর্ষণ ইত্যাদি জোটে।
ছয় নম্বর  সেটা তাদের জন্মগত অধিকার বলে মনে করে, বোধহয় পাঁচনম্বরও তাদের জন্মের প্রাপ্তি বলে মেনে নেয়।


তাহলে ছয়টা দেশ আমার স্বদেশ।
উঁহু হলো না, আসলে আটটা।
পুরুষের ভারতবর্ষ আর নারীর ভারতবর্ষ।
প্রথমটায় টোন কাটবার, কনুই মারবার আর বুরা না মানো হোলি হ্যায় বলবার জন্মগত অধিকার।
দ্বিতীয়টায় প্রাপ্তি ‘ না পোষালে ট্যাক্সিতে যান’ আর ‘ অমন পোশাকে ওই সময়ে বেরিয়েছিলো কেন’ ।
মজার ব্যাপার হলো, এই উক্তিগুলো সবসময় সাতনম্বরের বাসিন্দাদের নয়।
সাত নম্বরের ভদ্র নাগরিকের নিরন্তর ভয় এই বুঝি ফোর নাইন্টি এইট বা সহবাস আইনে হাজতবাস হলো,
আর আটনম্বরের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি শরীরে, চরিত্রে মনে আর মননে অবাঞ্ছিত আগন্তুকের হানা।


তাহলে ভারতবর্ষ আটটা। উঁহু হলো না...


আর্যতীর্থ