নিরুদ্দেশি বাপ যে আমার
মায়ের নেইকো ঠিক,
শরীর বেচে খাই আমি তাই
সমাজ দেয় গো ধিক।


জন্ম আমার দাদুর ঘরে
এখন বেঁচে নেই,
বয়স আমার ষোল হতেই
হারিয়ে ফেলি খেই।


সাঁঝবেলাতে ফিরছি যেদিন
রেশন নিয়ে ঘরে,
রকের মোড়ের কুকুরগুলো
শরীর কামড়ে ধরে।


চিৎকারেতে জাগিয়ে পাড়া
পুলিশ এল হেঁকে,
কায়দা করে আড়চোখেতে
শরীর নিল চেখে।


ভদ্দলোকের পাড়াতে আর
মিলল না যে ঠাঁই,
দুগ্গা হলাম 'হতচ্ছাড়ি'
'বেশ্যা' 'মাগি' 'বাই'।


ঠোঁটরাঙা এক মাসি এসে
কারবারেতে ভিড়ায়,
ভাগ্য আমায় নগ্ন করে
জীবন মুখ ফিরায়।


বুকের ভাঁজে পাথর গুঁজে
শরীর দিলাম ছেড়ে,
ভদ্দ-পোষাকি কুত্তারা সব
ছুট্টে এল তেড়ে।


নাম-ডাকেতে ভরল পাড়া
খদ্দেরেতে বাণ,
রাত-বিরেতের রাজ্ঞী-ঘরে
মন্ত্রী মেহেমান।


বছর সাতেক পেরিয়ে বয়স
শরীর ভাঁজে ভাসে,
থুবড়ে পড়া স্বপ্নেরা সব
লাল-বাতিতে হাসে।


মা বলতো নারী মানেই
দুগ্গা মায়ের রূপ,
দশহাতি তুই কোথায় ছিলি
ছিঁড়ল যেদিন বুক?


দুগ্গা মাগো কপাল ভালো
মূর্তিতে তোর বাস,
নইলে কি আর রক্ষা পেতিস
ছুটিয়ে মারত ত্রাস।


সপ্তমীতে পুরুত ঠাকুর
আলতি যখন করে,
'দিনের সাধু' 'সাঁঝলি- বাবু'
শরীর চেপে ধরে।


ধূপকাঠি তার গন্ধ ছড়ায়
ভক্তেরা গায় গান,
কালী সেজে তখন করি
লাল-মদেতে স্নান।


আঁধার আমার যাপন সঙ্গী
বিছানা সুখের চাবি,
অফার দিচ্ছি দুগ্গা আমি
আয় কত আজ খাবি!


পরতে পরতে বিষ মেখেছি
কামড়ে ধরে খা,
আয় শালারা,গোলাম- গাধা
ভদ্দলোকের ছা।


মৃত্যুও আজ ঘেন্না ছুঁড়ে
পালায় বেকিয়ে মুখ,
ঢের দিয়েছো দুগ্গা মাগো
জিয়নে মরণ-সুখ।


এই পাড়াতে তুইও নাহয়
ঘর খুলে মা বস,
বুঝবি তখন দুগ্গা আমার
আভূমি দু:খ-যশ।


দশহাতে তো অস্ত্র ভোঁতা
তিন চোখ-ই কি কানা?
বুক ফুলিয়ে সন্ত্রাসী সব
দিচ্ছে দেশে হানা।


বেশ্যা আমি মরছি ভেবে
দেশের কথা কত!
আমায় নাহয় মেরে বাঁচা
মায়ের দুগ্গা যত।


শূণ্য হবে বিশ্বে যেদিন
ধর্ষণেরই হার,
বুঝবো সেদিন দুগ্গা তোমার
শক্তি চমৎকার।


লাগবে না যবে তোর পুজোতে
বেশ্যা-দোরের মাটি,
ফেউ-পুরুষেরা জব্দ হবে
মা হবি তুই খাঁটি।


নইলে মাগো তোর দোহাই-এ
সমাজ বেশ্যা পোষে,
আর অস্ত হতেই খোলস ছেড়ে
বেড়ায় দেহ চষে।


পারিস যদি মান বাঁচাতে
তবেই জন্ম দিস,
নইলে দেবী জুটবে না তোর
সেলাম কুর্নিশ।