ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৭, ভাগ-৬২> – কবিতার নানা রূপ (বিদেশি ছন্দবন্ধ)
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
-------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ – লিমেরিক
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি অতনু দত্ত মহাশয়কে।              
------------------------------------------------------------------------------
পঞ্চপদী ছড়া বা লিমেরিক (Limerick)' হল পদ্যের এক বিশেষ ধরনের রচনাশৈলী, যা সাধারণত ৫টি চরণে হয়। মিলের বিন্যাস : ক ক খ খ ক। ৩য় ও ৪র্থ পঙ্‌ক্তি অন্যগুলোর চেয়ে মাপে ছোটো হয়।  ইংরেজি নার্সারী রাইম থেকে এর উৎপত্তি। লঘু, উদ্ভট বা আজগুবি বিষয় নিয়ে লিমেরিক লেখা হয়। এই ছড়া সমূহ কখনও হাস্যরসাত্মক, আবার কখনও সীমা লঙ্ঘন করে থাকে।
বাংলা একটি লিমেরিক-
"তাঁতীর বাড়ি ব্যাঙের বাসা
কোলা ব্যাঙের ছা।
খায় দায়,
গান গায়,
তাইরে নাইরে না "
লিমেরিকের গল্পঃ লিমেরিক আয়ারল্যান্ডের একটি জায়গার নাম। ফ্রান্সের সৈন্যদলের আইরিশ ব্রিগেডিয়াররা ওই লিমেরিকে অবস্থান কালে এ রকম ছোটো ছোটো ছড়ার গান গাইত এবং শেষ লাইনে থাকত ধোয়াশার মতো এ কথাটি “ Let us come up to Limerick”. সুর করে কোরাসের মাধ্যমে এ গানগুলো গাওয়া হত। কোনো এক অজানা কবির হাতে সৃষ্টি হয় এ গীতিকবিতা। সৈন্যরা হয়ত লিমেরিকের এই ধরনটার অনুকরনে মুখে মুখে ছড়া তৈরী করে মুখে মুখে গান গাইত। যূদ্ধশেষে যে যার বাড়ি ফিরে তারা তাদের ভাবী বংশধরদের এ গান শোনাতো। লিমেরিক স্থান থেকে আমদানি বলে এবং “Let us come to Limerick” এ শেষ কথাটি “Limerick” বলে এ ছোটো গীতিকবিতাগুলোর নাম হয়ে যায়; হাস্যরসাত্মক ছোটো কবিতার এক অনন্য রচনাশৈলীর নাম “লিমেরিক”। (সংগৃহীত)
আমাদের প্রিয় সত্যজিৎ রায়ের তিনটি লিমেরিক উল্লেখ করছি –

"এক যে সাহেব তার যে ছিল নাক
দেখলে পরে লাগত লোকের তাক
হাঁচতে গিয়ে হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ
নাকের মধ্যে লাগল প্যাঁচ
সাহেব বলে, ‘এইভাবেতেই থাক।"

"পাগলা গরু সামলানো যা ঝক্কি,
আমার কথা শুনবে কেনো লোক কি?
কাছে যখন পড়বে এসে
বলবে তারে মিষ্টি হেসে,
‘আমার ওপর রাগ কোরো না লক্ষ্মী!"

"চোরের ভয়ে রামনারায়ণ খোট্টা
ঘুমোয় বসে বন্ধ করে দোরটা,
এই সুযোগে দুই ইঁদুরে
দিব্যি খেলো পেটটি পুরে
ঝোলানো তার সাধের হ্যাট আর কোটটা।"


লিমেরিক সম্বন্ধে কিছু জ্ঞাতব্য বিষয়:


১) লিমেরিকের সর্বাধিক প্রচলিত ধারাটি হল,প্রথম,দ্বিতীয় ও পঞ্চম লাইন দীর্ঘতর হবে এবং তাদের অন্ত্যমিল থাকবে। তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন হ্রস্বতর হবে এবং তাদের অন্ত্যমিল থাকবে।
২) দীর্ঘতর লাইনগুলির অক্ষর সংখ্যা ১৪ থেকে ১৮ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে এবং প্রতিটি লাইনের অক্ষর সংখ্যা সমান হলে ছন্দমিল চমৎকার হয়। তবে দীর্ঘতর লাইন গুলির অক্ষর ১৪ রাখতে পারলে এবং ছন্দ বিভাগ ৮+৬=১৪ হলে লিমেরিক সবচাইতে সুন্দর হয়।
৩) হ্রস্বতর লাইনগুলির অক্ষর সংখ্যা ৮ থেকে ১২ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে এবং প্রতিটি লাইনের অক্ষর সংখ্যা সমান হলে ছন্দমিল চমৎকার হয়। তবে হ্রস্বতর লাইনগুলির অক্ষর সংখ্যা ৮ রাখতে পারলে এবং ছন্দবিভাগ ৪+৪=৮ হলে লিমেরিক সব চাইতে সুন্দর হয়।
৪) লিমেরিকে একই বর্ণ বহুল ব্যবহার করে অনুপ্রাস অলঙ্কারের মাধ্যমে লিমেরিক শ্রুতিমধুর করা যায়‌।


***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) সাহিত্যের রূপ -রীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ– কুন্তল চট্টোপাধ্যায়
                    ২) লিমেরিক সম্বন্ধে কিছু জ্ঞাতব্য বিষয়: সমরকুমার সরকার
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করবেন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।