ছন্দ ও কবিতার পাঠ –১৫ - ছেদ ও যতি
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি মৌটুসি মিত্রগুহ মহাশয়াকে।        
------------------------------------------------------------------------------
পূর্বপাঠ
১২) সিলেবল বা অক্ষর বা দল  
১৩) অক্ষরের শ্রেণিবিভাগ
১৪) মাত্রা বা কলা
------------------------------------------------------------------------------
আজকের বিষয়-  ১৫) ছেদ ও যতি  
------------------------------------------------------------------------------
ছেদ বা যতি কথার অর্থ হচ্ছে উচ্চারণ বিরতি। কবিতা আবৃত্তির সময় শ্বাস গ্রহণ বা শ্বাস ত্যাগের প্রয়োজনে এবং সুবোধ্য ও সুচারুরূপে ভাব প্রকাশের জন্য মাঝে মাঝে থামার আবশ্যিকতা দেখা দেয়। এই থামাকে বিরাম বা ছেদ বা যতি বলে। ছেদ যেমন বিরামস্থল, যতিও তেমনি বিরামস্থল। তবে যতি ও ছেদের অর্থ এক নয়। কবিতার চরণে ছেদ পড়ে অর্থানুযায়ী, কিন্তু যতি পড়ে এক এক বারের ঝোঁকে চরণের যতখানি অংশ উচ্চারিত হয় সেই অনুযায়ী।
১) ছেদঃ বাক্যের আংশিক বা সামগ্রিক অর্থ প্রকাশের জন্য ধবনিপ্রবাহে যে উচ্চারণ বিরতি ঘটাতে হয় তাকে বলে ছেদ (বা অর্থ যতি বা ভাব যতি)
ছেদ প্রধানত দু প্রকারের।
ক) হ্রস্ব বা লঘুচ্ছেদ, খ) পূর্ণ চ্ছেদ
ক) হ্রস্ব ছেদের আবার দু'টি ভাগ।
অ) হ্রস্ব বা লঘুচ্ছেদ- বাক্যের আংশিক অর্থ প্রকাশের জন্য যে স্বল্প ক্ষণের বিরতি। এর চিহ্ন- কমা (,)।
আ) মধ্যচ্ছেদ বা অর্ধচ্ছেদ- বাক্যের অনেকটা অংশের অর্থ প্রকাশের জন্য হ্রস্বচ্ছেদ অপেক্ষা একটু বেশি ক্ষণের যে বিরতি তা মধ্যচ্ছেদ। এর চিহ্ন সেমিকোলন (;)।
খ) পূর্ণচ্ছেদ- বাক্যের সমগ্র অর্থ প্রকাশের জন্য পরিপূর্ণ ভাবে যে থামা, তা পূর্ণছেদ। এর চিহ্ন দাঁড়ি (।)।
যেমন- “আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না।“
২) যতিঃ ছন্দবিধি অনুসারে ছন্দতরঙ্গ সৃষ্টিতে প্রধানত পদ্যে একটি সুনির্দিষ্ট কালের ব্যবধানে ধ্বনি প্রবাহে যে উচ্চারণ বিরতি, তাকে বলে যতি বা ছন্দযতি।
যতিও দুপ্রকারের।
ক) হ্রস্ব বা লঘুযতি, খ) পূর্ণ যতি
ক) হ্রস্বযতির আবার দুটি ভাগ।
অ) হ্রস্ব বা লঘুযতি- স্বল্প ক্ষণের বিরতি। একটা লম্বা দাঁড়ি চিহ্ন (।) দিয়ে এই লঘুযতি বোঝানো হয়।
আ) মধ্যযতি বা অর্ধযতি- হ্রস্বযতি অপেক্ষা বেশিক্ষণের বিরতি, কিন্তু পূর্ণ বিরতি নয়। উল্টানো (T) চিহ্ন দিয়ে এটি বোঝানো হয়।
খ) পূর্ণ যতি- পরিপূর্ণ বিরতি। একজোড়া দাঁড়ি চিহ্ন (।।) দিয়ে বোঝানো হয়।
যেমন- এ জগতে হায়। সেই বেশি চাই T আছে যার ভুরি। ভুরি।।
     যতির প্রসঙ্গে তিন প্রধান যতির উল্লেখ করা হয়েছে। এরা সব সময় প্রত্যাশিত জায়গায় স্পষ্ট ভাবে পড়ে না। ছন্দে যতির অভাবকে বলা হয় যতিলোপ। পূর্ণযতির লোপ হয় প্রবহমান ছন্দে, যেখানে ভাব অনুযায়ী যতি পড়ে এবং তার উদাহরণ মেলে অমিত্রাক্ষর ছন্দে। এ বিষয়ে পরে আলোচনা করা হবে। অর্ধযতি লোপের প্রয়োগ সাধারণত দেখা যায় না। যতিলোপের ব্যবহারে লঘুযতি লোপের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ পর্ব চিনতে গিয়ে জানার প্রয়োজন লঘুযতি কোথায় পড়ছে, এবং সাথে জানতে হয় কোথায় লঘুযতিলোপ ঘটছে।  লঘুযতিকে দেখানো হয় (:) চিহ্ন দিয়ে। যেমন- “কহিলা ‘দে : খিতে হবে || কতখানি | দিলে তবে ||”
      এখানে লঘুযতিলোপ ঘটেছে ‘দেখিতে’ র মাঝে এবং সেখানে পর্বের ভাগ হয়েছে। সারিটিতে পাওয়া যায় চার পর্ব ও দুই পদ।


***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে। পরবর্তীপর্ব ৩রা অক্টোবর।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) ছন্দ পরিচিতি –  এস এম আবদুল লতিফ, ঢাকা।  
----------------------------------------------------------------------------
আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানিয়ে লেখাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবেন।