ছন্দ ও কবিতার পাঠ –১৭ - পদ, চরণ, পঙক্তি, স্তবক
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি ফয়েজ উল্লাহ রবি মহাশয়কে।        
------------------------------------------------------------------------------
পূর্বপাঠ
১৪) মাত্রা বা কলা
১৫) ছেদ ও যতি  
১৬) পর্ব ও পর্বাঙ্গ
------------------------------------------------------------------------------
আজকের বিষয়-  ১৭) পদ, চরণ, পঙক্তি, স্তবক
------------------------------------------------------------------------------
পদ
মধ্য (অর্ধ ) যতির দ্বারা নির্দিষ্ট খণ্ডিত ধ্বনিপ্রবাহকে পদ বলে। পদ এক বা একাধিক পর্বে গঠিত। চরণের শুরু থেকে প্রথম মধ্যযতি পর্যন্ত খণ্ডিত ধ্বনিপ্রবাহ হল পদ।
যেমন-
তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ⊥ দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣∣
তোমাতে আমাতে ∣ রত ছিনু যবে ⊥ কাননে কুসুম ∣ চয়নে∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
(এখানে ⊥ দ্বারা মধ্যযতি চিহ্নিত করা হয়েছে।)
অর্থাৎ ‘তরুতলে আছি  একেলা পড়িয়া’ হল প্রথম পদ।
‘দলিত পত্র  শয়নে’ হল দ্বিতীয় পদ।
লক্ষনীয়, প্রতিটি পদ দুটি করে পর্ব নিয়ে গঠিত।
তবে এখন পদের ব্যবহার নেই। পয়ার, ত্রিপদী, চৌপদী তে পদ ছিল। এখন পদের পরিবর্তে চরণ ব্যবহার করা হয়।


চরণ  
পূর্ণযতির দ্বারা নির্দিষ্ট ও সম্পূর্ণ ধ্বনিপ্রবাহকে চরণ বলে। চরণ একাধিক পর্বে বা পদে গঠিত। যেমন-
তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ∣ দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣- ১ চরণ
তোমাতে আমাতে ∣ রত ছিনু যবে ∣ কাননে কুসুম ∣ চয়নে∣ -২ চরণ
মনে রাখা দরকার
ক) প্রতিটি লাইনই এক একটি চরণ;
খ) চরণের বৈশিষ্ট্য হল বহু পর্বিকতা।


পঙক্তি ( বা ছত্র )
পঙক্তি শব্দের অর্থ লিখিত সারি। এই সারি কবিতার পর্ব, পদ বা চরণ দিয়ে গঠিত। অর্থাৎ পঙক্তি হচ্ছে কবিতার পর্ব, পদ বা চরণ সাজানোর কৌশল। কিন্তু চরণ মাত্রই পঙক্তি নয়।
যেমন-
তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ∣ দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣- ১ টি পঙক্তি
আবার
তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ∣  ১ পঙক্তি
দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣-  ২ পঙক্তি
আবার তরুতলে আছি ∣ ১ পঙক্তি
একেলা পড়িয়া ∣ ২ পঙক্তি
দলিত পত্র ∣ ৩ পঙক্তি
শয়নে ∣৪ পঙক্তি
অর্থাৎ চরণকে ভেঙে একাধিক সারিতে সাজালে প্রতিটি লাইনই হবে পঙক্তি।
১ পদ= ১ পঙক্তি
পঙক্তি কে ছত্র বলা যায়।


স্তবক  
অনেকগুলো চরণ নিয়ে একটি স্তবক গঠিত হয়। সাধারণত, একটি স্তবকে একটি ভাব প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশক, একাধিক চরণের সুসংযত গুচ্ছবদ্ধ রূপ হল স্তবক। গদ্যে যেমন পরিচ্ছেদ, পদ্যে তেমনি স্তবক। কবিতার চরণ গুচ্ছের সুশৃঙ্খল ছন্দগ্রন্থি হল স্তবক। স্তবক গঠিত হয় দুই বা আরও বেশি পঙক্তি নিয়ে। স্তবক ছন্দের বৃহত্তম একক, বিপরীতে মাত্রা ছন্দের ক্ষুদ্রতম একক। একটি স্তবকে কবিতার মূল ভাবের এক অংশের প্রকাশ হয়, অন্য একটিতে পরিবেশিত হয় ভাবের আরেক অংশ, এবং সেই মতো এগোয় কবিতার রচনা। পঙক্তির সংখ্যা অনুসারে স্তবকের বিভিন্ন নাম হয়, যেমন- দ্বিক(যুগ্মক), ত্রিক, চতুষ্ক, পঞ্চক, ষটক, সপ্তক, অষ্টক ইত্যাদি।  
যেমন- একটি চার চরণের স্তবক-  
আঠারো বছর  বয়সের নেই  ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ  মাথা নোয়াবার  নয়-
আঠারো বছর বয়স জানে না  কাঁদা।


***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাঙলা ছন্দ –  জীবেন্দ্র সিংহরায় , কলকাতা।    
----------------------------------------------------------------------------
আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানিয়ে লেখাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবেন।