ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৪, ভাগ-৩৯>  –  মাত্রাবৃত্তের আরও কিছু
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি সঞ্জয় কর্মকার  মহাশয়কে।  
---------------------------------------------------------------------------  
প্রধানত ধ্বনি বা মাত্রা নির্ভর ছন্দই মাত্রাবৃত্ত ছন্দ। এই ছন্দে প্রতিটি ধ্বনি স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে বদ্ধাক্ষর সব সময় দুই মাত্রা আর মুক্তাক্ষর এক মাত্রা। এই নিয়মে-
"আমাদের/ ছোটো নদী/ চলে বাঁকে/ বাঁকে
বৈশাখ/ মাসে তার/ হাঁটু জল/ থাকে
পার হয়ে/ যায় গরু/ পার হয় /গাড়ি
দুই ধার/ উঁচু তার/ ঢালু তার /পাড়ি
চিক চিক/ করে বালি/ কোথা নেই/ কাঁদা
এক ধারে /কাশ বন/ ফুলে ফুলে/ সাদা"
এখানে পুরো কবিতায় পূর্ণপর্ব গঠিত হয়েছে ৪ মাত্রায়। এই কবিতাটি ৪ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত চালে রচিত। এই কবিতার পর্ব বিন্যাস হচ্ছে- ৪/৪/৪/২।
মাত্রাবৃত্ত ধীর বা বিলম্বিত লয়ের ছন্দ। সে কারণে এই ছন্দ ললিতমধুর। সাধারণত কাব্যধর্মী রচনায় এ ছন্দের ব্যবহার মাধুর্য লাভ করে। গল্পাশ্রয়ী বীররস বা করুণরসের দীর্ঘ রচনার জন্য এ ছন্দ বিশেষ উপযোগী।
আবার ত্রিপদী কবিতায় এই ছন্দের বহুল ব্যবহার আছে।
আধুনিক ঘরানায় কবি রজতশুভ্র মজুমদারের 'কবিতা' কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দের সুন্দর বুননে আবদ্ধ।
“আপে ও ডাউনে/ দুটি ট্রেন পাশা/পাশি
জানালা উঁচিয়ে/ শুধু দু 'পলক /দেখা
ছিপ ছিপে তনু/ বেগুনি শাড়িতে/ মোড়া
উরসে কবিতা/ উগ্র হরফে/ লেখা।“
৬/৬/২ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কবিতাটি আছে।


***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।  
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) ছন্দের সহজপাঠ- সুজন বড়ুয়া  
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।