(১)
আমরা কৃষক, আমরা চাষি, ফসল ফলাই জমিতে-
তবু তোমায় করি পূজা জানি না কোন স্বার্থেতে।
দল বেঁধেছি, সঙ্গে থাকি কখনও তা ভুলিনি
রেখেছো যে চাষি করে, কিন্তু "মানুষ করোনি"।


আমরা শ্রমিক, আমরা কর্মী কলে কারখানাতে-
মালিক কৃপায় বেঁচে আছি আমরা কোনোমতে।
'সমাজতন্ত্র' করতে বুঝি শিরোধার্য ওই বাণী
আমি আছি শ্রমিক হয়ে, কভু "মানুষ করোনি"।


আমরা ছাত্র, আমরা তরুণ পড়াশোনা মন্ত্র করি;
তোমার কথায় সর্বক্ষণে আমরা সবাই মান্য করি
মিটিং-মিছিল, পদযাত্রা সভাতে আমরা জানি
আছি তরুণ শিক্ষার্থী যে তুমি "মানুষ করোনি"।


শিক্ষাব্রত শিখে মোরা কাজ না পেয়ে বেকার
সব কিছুতেই সাথে আছি নহি ভিন্ন প্রকার;
দেয়াল লিখি পোস্টার আঁটি সকল কথা শুনি
আজ আমি বেকার হয়ে তবু "মানুষ করোনি"।


                    (২)
আমরা সবাই আজ সাধারণ, দয়ায় হইনি ভোটার
প্রলোভন দাও, ভোট নিয়েছ চাইনি তার প্রতিকার!
ভয় পেয়েছি, আওয়াজ শুনি নীরবে তা মানি
ভোটার হয়ে আছি আমি, বুঝেও "মানুষ করোনি"!


অক্ষর জ্ঞান ছিল না যে বছর কয়েক আগে
আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছি আজ তোমার অনুরাগে;
কোনোদিন তাই তোমার কৃপা আমি জানতে চাইনি
আমাকে দাও অজ্ঞানতা, তবু "মানুষ করোনি"।


আমরা প্রিয় রক্ষাকর্তা বাহিনী রাজ্যজুড়ে
সর্বত্র যে শাসন করি অন্দরে-অন্তরে!
তোমার আদেশ কখনও  তাই অমান্য করিনি-
রাখো ঢেকে উর্দিতে আজ, কিন্তু "মানুষ করোনি"।


চাকরি পাইয়ে দিয়েছ যে হয়েছি অনুগত
সমস্ত কাজ পালন করি তোমার কথামতো।
'সংস্কৃতি' ভুলতে পারি তুমি দয়ারখনি;
কর্মচারী হয়ে আছি  আজ "মানুষ করোনি"।


                  (৩)
কত করি ইউনিয়ন, অমুক-তমুক সতেরো;
তোমার অভয় থাকলে সাথে করতে পারি আরও।
বিচিত্র সব নাম দিয়েছি এখনো হাল ছাড়িনি-
আমি আছি সদস্য হয়ে তুমি "মানুষ করোনি"।


অনেক অভয় দিয়েছ মোদের গড়েছি যে দল
গ্রামের পথে মিছিলিতে নামাই মোদের ঢল;
বাড়ি ছেড়ে পথে আসি আমরা ঘরের রমণী
দিয়েছ যে মহিলা রূপ তবু "মানুষ করোনি"।


আমি খাচ্ছি শাক দিয়ে ভাত, তুমি মাছের ঝোল
তুমি থাকো রাজধানীতে আমি আমলাশোল।
তুমি থাকো সুখের মাঝে, আমি থাকতে পারিনি
রেখেছ আজ দরিদ্র করে মোটে "মানুষ করোনি"।


তোমার দয়ার রাজ্যে আজ মদে সামিয়ানা-
তাই একটু মোহে থাকি না খেয়ে যে পারিনা।
'তালেতে ঠিক, জাতে মাতাল' তোমাকে ঠিক জানি
আমি আছি মাতাল হয়ে তুমি  "মানুষ করোনি"।


                  (৪)
তোমার কথায় করেছি খুন, নাম পেয়েছি কুখ্যাত!
আমি সাজা খাটছি জেলে, তুমি হলে বিখ্যাত।
নাম পেয়েছি খুনি হার্মাদ হয়েছি মূল্যহানি
রেখেছ যে  ঘাতক করে "মানুষ করোনি"।


দিয়েছ স্বাধীনতা, লাইসেন্স অধিকার
দেশময় যৌন পেশায় শুধু অন্ধকার
মডেল নগ্নতায় সকলের হাতছানি-
রেখেছ আজ শরীর করে "মানুষ করোনি"।


নামেতে শিক্ষক আমি পাঠশালাতে ছাত্র
সকল কর্তব্য মেনে তোমার দয়ার পাত্র
বিদ্যালয়ে ছাত্র পড়াই মিছিলে দিই শাসানি
পরিচয় যে শিক্ষক আমি তবু "মানুষ করোনি"।


তোমার কিছুটা দয়ায় নাম পেয়েছি মিডিয়া
কথা ছবি প্রচার করি তোমার মুখ চাহিয়া।
এইকালে সমকালে তোমার উদার বাণী
নামে আছি  মিডিয়া হয়ে আজ "মানুষ করোনি"।


              (৫)
সকলেতে মিলেমিশে নাম দিয়েছি ফ্রন্ট
ক্ষমতার ও চূড়ামণি তুমি এখন লর্ড।
কাজের সময় মিষ্টকথা হই প্রয়োজনী
রেখেছ আজ শরিক করে তুমি "মানুষ করোনি"।


আমরা তোমার বড়ো শক্তি 'কমরেড' নামের আগে
জনপদে অফিস খুলি তোমা ভক্তি অনুরাগে;
ভোট যুদ্ধে এগিয়ে আসি কখনও হারিনি
'ক্যাডার' করে রেখেছ যে তবু"মানুষ করোনি"।


আমরা সবাই লেখক-শিল্পী নাম পেয়েছি 'বুদ্ধিজীবী'
কলম ধরি তোমার কথায়, তোমার কথায় লিখি সবই
আজকে বঙ্গের আপৎকালে তবুও তুমি চূড়ামণি!
রেখেছ তাই লেখক-শিল্পী করে "মানুষ করোনি"।


আমরা বেঁচি ছোলা- বাদাম, ন্যাপথলিন, চুলের ফিতে
হাটবাজারে, প্ল্যাটফর্ম চলন্ত রেলের গাড়িতে
আদালত তাই আইন দিল, সাহস দিলে রক্ষামণি
রেখেছ আজ হকার করে, সরি "মানুষ করোনি"।
             --------


** কবিতাটি লেখা হয় ২৪/৬/২০০৭ তারিখে। কোনো একটি পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম। ক'দিন আগে খুঁজে পেলাম। তাই ৫ দিনে পোস্ট দিলাম।