বাংলা বানান এবং ছেদ যতি প্রসঙ্গে
গত ০৪/০৯/২০১৬ তারিখে বাংলা কবিতা সাইটে আমাদের প্রিয় কবি পল্লবের “হারানো ফাগুন” নামে একটি সুন্দর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। অনেক মন্তব্যের মধ্যে অনিরুদ্ধ বুলবুলের মন্তব্য খুব ভালো লেগেছিল। তিনি একটি বানান নিয়ে জানাতে চেয়েছিলেন তার লেখাটি এমন – “অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই প্রিয় কবিকে।
পুরানো লেখা হলেও ভালো লাগল। একটা টাইপে সমস্যা হয়েছে। 'মনের কোণে' হবে বোধ হয়!” তার উত্তরে প্রিয় কবি পল্লব জানিয়েছিলেন – “ধন্যবাদ! 'কোণে' করে দিলাম। 'কোনা' শব্দের অর্থ একই হলেও এতে করে হওয়ার কথা ছিল 'কোনায়'। 'কোনে' যে হয় না তা খেয়াল করিনি। এই অছিলায় বাংলা ডিকশনারিটা খুলে বসলাম অনেকদিন পর”। এখানে একটা কথা খুব মনে দাগ কাটল- “এই অছিলায় বাংলা ডিকশনারিটা খুলে বসলাম অনেকদিন পর“। আমার প্রশ্ন আমরা যারা এই সাইটে কবিতা লিখি তাদের অনেকেই বাংলা অভিধান খুলে দেখি কি?
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। তাই আমরা বাংলা বলা এবং লেখায় সমান পারদর্শী। তা সাধু ও চলিতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাংলা কবিতার সাইটে একমাস হল আমি প্রবেশ করেছি। কিন্তু একটি বিষয়ে খুব হতাশ হয়ে পড়ছি। সেটি হল, বেশ কিছু  কবিতায় বানান ও ছেদ যতির সঠিক ব্যবহার দেখছিনা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কবি বন্ধুর কবিতায় বানান শুদ্ধ করে দেবার পরামর্শ দিচ্ছি বা সঠিকটি লিখে দিচ্ছি। অনেকে গ্রহণ করে সংশোধন করছেন, আবার অনেকে করছেন না।
বাংলা কবিতা সাইটের শৌখিন কবিরা মূলত দুটি শ্রেণির। এক শ্রেণির কবিরা খুব পরিণতভাবে সুন্দর ভাবনায়, বানানের দিকে নজর রেখে অসাধারণ সব কবিতা উপহার দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা অনেক পুরানো লেখা বা প্রকাশিত লেখা আবার এই আসরে প্রকাশ করছেন। এক্ষেত্রে কোনো ভুল তো নেই, বরং সেখানে অনেক কিছু জানার বা শেখার আছে। আর একটি শ্রেণিকে দেখছি যারা সরাসরি কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন থেকে কবিতা (?) লিখে দিচ্ছেন।  তাদের উদ্দেশে বলি অন্তত “প্রকাশ করুন” নির্বাচন করার আগে কবিতাটি একবার দেখে নিন। অনেক সময় নিজের ভুল নিজের কাছেও ধরা পরে। কোনো একজন কবির মন্তব্যের উত্তরে আজ একজন কবি উত্তরে লিখেছে-“হা হা হা! ঠিক ঠিক!আসলে এটা ঘুমোতে যাওয়ার আগে instant বানিযে় post করেছিলাম....তাই হয়তো বেশ কিছু ভুল ভ্রান্তি আছে!এখনো নিজের খাতায় স্থান দেওয়া হয়নি....ধন্যবাদ “।
একটি কবিতা খাতায় বা ডায়ারিতে লেখা, আর ছাপা অক্ষরে বই এর পাতায় প্রকাশিত হবার মধ্যে অনেক ব্যবধান। বইয়ের পাতা আর বাংলা কবিতা ওয়েবসাইট এর মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি! বরং সাইটের ব্যাপ্তি অনেক বেশি, বিশ্ব জুড়ে। আর কবিতার বই কোনো প্রদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই বাংলা অভিধান হাতের কাছে রাখা প্রয়োজন। কবিতায় এমন ভুল থাকলে পাঠকের মনে হতাশার উদ্রেক হয়। কবিতা লেখাটা “এস এম এস” করা নয়, বা ফেসবুকের কমেন্ট নয়। এটা কবিসত্তা । এর ভবিষ্যৎ আছে।
এখানে “অভ্র” তে টাইপ করতে হয়। অনেক সময় টাইপেও ভুল হয়ে যায়। ভুল তো হতেই পারে! সেটা অপরাধ নয়। কিন্তু প্রকাশ করার আগে একবার দেখে নেওয়া আবশ্যিক। মনে করুন প্রুফ দেখছেন। তাছাড়া “অভ্র” টাইপ করা খুব কঠিন নয়। “অভ্র কি বোর্ড” ডাউনলোড করে নিন আর একবেলা অভ্যাস করলে সহজেই লেখা যায়।
পুনশ্চঃ এই লেখার মধ্য দিয়ে আমি কাউকে আঘাত দিতে চাইনা বা জ্ঞান দেওয়াটা আমার উদ্দেশ্য নয়। বাংলা কবিতা সাইটের মাধ্যমে কবিতার মানকে উন্নত করাটা সকলের সাথে আমারও উদ্দেশ্য।