সুফিয়া মমতাজ (কাব্যগ্রন্থ) : ২১ (০২/১১/২০১৮) অংশের পর-


           ।।২২।। ভাইকে ভোলায় দিদি
সন্ধ্যার আগে মাদ্রাসা থেকে যখন ফিরি গো বাড়ি
আনাচে কানাচে তোমার ছেলের প্রবল দখলদারি।
সকল জিনিস কতই খেলনা সব ওর সাম্রাজ্য;
খেলার পাগল সেই ছেলেটার কপালেতে এত সহ্য!
আমি রাজা নই, তবুও সে রাজা কতক খেলনা তার;
সারা বাড়ি জুড়ে উকি দেয় শুধু অবারিত আবদার।
ছোটো থেকে বড়ো সাজানো যে আছে সকল দামের খেলা;
তাই দেখে তার সময় কাটিছে ভুলে থাকে সারাবেলা।


ওর কাছে বাড়ি আসল পৃথিবী আমরা সকল গৌণ;
তোমায় না দেখে সেই ছেলে আজ এতটাই বুঝি মৌন।
কিছুই বোঝে না- সে বালিরঘাট, বেপরোয়া সেই বাস;
সলিলসমাধি ঘটেছে মায়ের কতই সর্বনাশ।
কী করে সে বোঝে বুঝবে কেমনে বোঝা সম্ভব নয়;
কী আজ হারাল! কী ব্যথা সে পেল, কোথা তার পরাজয়।
কত কোলাহল কত ক্লান্তি মায়ের শেষের যাত্রা-
সন্ধ্যাবেলার সেই চিৎকার বুঝেছে ভিন্নমাত্রা।


যখন তোমার ছেলে শুধু কাঁদে কান্নায় করে 'মা'- 'মা'-
দিদি এসে তার একটি দৌড়ে এনে দেয় কত খেলনা।
ভাইয়ের বুঝি, আজ সেই সব, দেয় বুঝি সান্ত্বনা-
মনের কোণেতে কেঁদে ওঠে মেয়ে কাউকে বুঝতে দেয়না।
মানিশ মানিশ -চেয়ে দেখ ভাই তোর সে মজারগাড়ি!
এই কথা শুনে ওগো বধূ মোর আমি কি সইতে পারি?
সুন্দর গাড়ি, তুই খেল ভাই, আরেকটা দিই এনে-
সব কিছু নিয়ে খেলে যায় ভাই সকল খেলনা চেনে।


এরমাঝে বুঝি পেয়ে যায় আজ তার সে মায়ের নেশা-
ভাইকে ভোলায় দিদিটি তাহার বুকে টেনে ভালোবাসা।
মা যে তার নেই এটা বোঝে ভাই দ্রুত ভুলতে হবে;
ও মাতৃহারা ছোটো সে মেয়েটি বুঝে গেছে কলরবে।
কেউ কি দিয়েছে এই গুরুভার সেও তো মাতৃহারা!
বয়সে কিছুটা বড়ো হয়ে বুঝি পেয়েছে এমন সাড়া।
সান্ত্বনা দিয়ে সব হয় না যে আমিও বুঝেছি ভুল;
এই বিশ্বাস করে গেছি আমি ভিজেয়েছি আঁখিমূল।
               -----------
** চলবে।