(গত ২৯/০১/২০১৮ তারিখে মুরশিদাবাদ জেলার দৌলতাবাদে একটি বাসের সলিলসমাধি ঘটে। মৃত্যু হয় ৪২ জন যাত্রীর। তার মধ্যে ছিলেন উনত্রিশ বছর বয়সী বিদ্যালয়শিক্ষিকা সুফিয়া মমতাজ। তার বিরহে তার স্বামীর কণ্ঠে আমার লেখা এই কাব্য। কবিতাটি পুর্বে ১২টি ভাগে ভিন্নরূপে এই সাইটে প্রকাশ করেছিলাম গত ১৯/৩/২০১৮ থেকে ৩০/৩/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত। এই কবিতাটি আবার পরিবর্ধিত, পরিমার্জিত, সংশোধিত আকারে প্রকাশ করছি। যা হবে আমার একটি কাব্যগ্রন্থ। চলবে বেশ কিছুদিন ধরে। কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ৬/৬/৬/১,২,৩ মাত্রায় লেখা।)


           ।।১।। বাস দুর্ঘটনা ও স্বামীর চিঠি
সকালে দেখেছি- খবর পাতায় 'সেতু থেকে জলে বাস';
উদ্ধার শুরু, মিলতেই থাকে একে একে কত লাশ।
টিভি-র সামনে জনতার ভিড় মানুষ উপছে পড়ে;
কী বেদনা যেন ঘটে গেছে আজ মানুষের অন্তরে!
লোকে জমায়েত ভৈরবী পার অশ্রু মানেনি বাঁধ;
রাজ্যের চোখ শুধু ওইদিকে আজ দৌলতাবাদ।
যে যেখানে ছিল, কাছাকাছি থাকে, সবাই জুটেছে যেন
প্রিয়জন ছেড়ে আর্তবেদনা প্রশ্ন উঠেছে- 'কেন?'


ফুটেছে আলোক, এসেছে সকাল, তবুও অন্ধকার
ঘুম ভেঙে সব করে কলরব বেদনার চিৎকার।
চারিদিকে যেন শান্তসকাল মধ্য মাঘের মাস
নির্মল ভোরে ঘটে গেল আজ কেমন সর্বনাশ।
সকালবেলার দূরপাল্লার বাস ছিল ভিড়ে ঠাসা;
যাত্রীরা প্রায় ঘুমিয়েই ছিল মনেতে শান্তি-আশা।
ভীষণ গতিতে ছুটেছিল বাস ছিল না নিয়ন্ত্রণ;
বিয়াল্লিশটি দেহের মাঝেতে 'সুফিয়া' সে একজন।


বয়স তাহার হয়নি তিরিশ, স্কুলের শিক্ষিকা;
স্কুল যাবে আজ, মা'র বাড়ি হয়ে- বদ্ধ ললাট লিখা!
ঘরে আছে ছোটো ছেলেমেয়ে তার, অতিছোটো কচিকাচা
সলিলসমাধি হয়ে গেল আজ জীবনে হল না বাঁচা।
স্বামীটি তাহার করিছে বিলাপ সৎকার সেরে এসে-
তার সব ব্যথা লিখে গেছে আজ প্রিয়াকেই ভালোবেসে।
বধূর তরেতে এই চিঠি তার বেদনার মাঝে স্মৃতি;
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে গেছে আজ অসহায় ভরা রাতি।


কতই স্বপ্ন দেখেছিল তারা কিছুই হল না শেষ;
নবীন প্রভাতে, নবীন বসনে সব কিছু নিঃশেষ।
স্নেহের 'বুল্টি' চলে গেছে তার কিছুটি না বলে-কয়ে
সারাটি জীবন কেমন করিয়া এই ব্যথা যাবে সয়ে।
প্রিয়া মোর তুমি! সখী মোর তুমি! আর কি পাইব চোখে!
আমাকে ছাড়িয়া পরানবন্ধু পাড়ি দিলে কোন লোকে।
আজ তাই বসি একা একা ভাবি বেঁচে থাকি নিয়ে ভুল;
চোখের জলেতে আজ লিখি চিঠি, তোমার সে মফিউল।
                      -------
* চলবে