সুফিয়া মমতাজ (কাব্যগ্রন্থ) : ২৬ (০৭/১১/২০১৮) অংশের পর-


                ।।২৭।। তারাও স্বজন
কতদিন হল - চলে গেছ তুমি! এই তো ললাটলিখন
যাদের সাথেতে তোমার সমাধি আজ তারা মোর স্বজন।
তাদের নিয়তি আমার নিয়তি একসাথে মিশে গেছে-
মাঝে মাঝে তাই খোঁজ নিতে যাই তাদের দুঃখের কাছে।
সাহস করিয়া সেদিন গিয়েছি এক সে মায়ের দোরে
সন্তানহারা বেদনাবিরহ জমা আছে অন্তরে।
ছেলে বুঝি তার যোগ্য ভীষণ নতুন সে অফিসার;
সেই ছেলে ভুলে শোকেতে জননী পাথরে রূপান্তর।


পরিচয় দিতে চিনতে পেরেছে তিনিও আমার মতো;
কত জনে জানে, কত জনে চেনে, মুখ বুঝি শতশত।
কত দুঃখ তার মনের মাঝারে, জমা আছে বোঝা দায়!
আজ তার কোনো সান্ত্বনা নেই, সে ব্যথার সীমানায়।
কেঁদে কেঁদে মায়ে করে গেছে আজ আল্লাতে অভিযোগ
'ছেলেকে আমার কুশলে রাখিয়া আমাকে দিত দুর্ভোগ'।
ছেলের মৃত্যু কোন সে মায়েতে সহজ করিয়া মানে-
বলতে বলতে গলাটি জড়ায় জলস্রোত আঁখিকোণে।


নবীন সে মন ভালোবাসিত যে যুবকযুবতী পাশ
ছুটির দিনেতে বাড়িতে আসিয়া নিত চাকরির ক্লাস।
কত প্রিয় তার ছাত্ররা আছে বেকার যুবক সবে-
তার কথা ভেবে শূন্য চেয়ারে কাঁদে তারা কলরবে।
সেই সব ভেবে মায়ের মনটি কেঁদে ওঠে বারেবার-
নবীন প্রাণেতে চাকরিতে ছিল দূর দেশে অভিসার।
কত সে স্বপ্ন তার মনে ছিল ভাবনা যে শত শত;
দীর্ঘশ্বাসে মায়ের বুকটি কেঁপে ওঠে অবিরত।


তার দুখে আজ সান্ত্বনা নেই বেসামাল রীতিমতো-
বারে বারে আসে সেই স্মৃতিখানি আবার আগের মতো।
কী আর বলার আছে গো আমার চুপ করে থাকা ছাড়া-
কী যে কান্না! কী সে আঁখিজল, তিনি সন্তানহারা।
দুঃখীর সাথেতে কথা বলে আজ দুঃখ করেছি ভাগ;
কত মিল যেন আমাদের সাথে নিত্য সে অনুরাগ।
একই ভাবনায় দিন কাটে আজ একই ভাবনায় রাত;
একই ভাবনায় চলেছে জীবন সমব্যথী প্রণিপাত।
               ----------
** চলবে।