সুফিয়া মমতাজ (কাব্যগ্রন্থ) : ০২ (১৪/১০/২০১৮) অংশের পর-


             ।।৩।। প্রথম খবর ও সর্বনাশ
বাসেতে তুলিয়া বাড়ি ফিরে আসি, শীতের সকাল কাটে-
ছেলেকে নিয়েই খেলাতে গেছি যে হাইস্কুলের মাঠে।
ছেলেটি আমার চালাইছে গাড়ি একাকী দাঁড়িয়ে থাকি;
মিষ্টিসকাল মিষ্টি সে রোদ আদরে গায়েতে মাখি।
পৌঁছাওনি যে, জানতে পেরেছি তখন পৌনে আট!
ভেবেছি পথেতে কোনো অসুবিধা ধীরে গেছে বালিঘাট।
হয়তো বা তুমি পাওনি আমাকে, ফোনেতে করেছ খোঁজ
যেমন ভাবেতে কথা বলি মোরা নিত্য বারতা রোজ।


না দেখেছি টিভি, না পেয়েছি খোঁজ, ফোনে করিনি ট্রাই-
তারপরে কত ফোন করে গেছি তোমার খোঁজ নাই।
কোনো এক বাস জলে পড়ে গেছে এ খবর পেয়ে গেছি
সব কিছু বুঝি শেষ হয়ে গেছে এ আন্দাজ করেছি।
যেতে গেছি আমি গাড়ি সাথে নিয়ে, আর সাথে ছোটোভাই;
পাড়াপড়শিরা আটকে দিয়েছে এভাবে ছাড়েনি আমায়।
ভাইতো আমার কেঁদেই চলেছে, আমি চুপ নির্বাক;
যখন পৌঁছায় সে বালিরঘাটে ভিড় দেখে হতবাক।


হাজার মানুষ হয়ে আছে জড়ো, জলেতে পড়িয়া বাস;
হইচই সাথে ইটের বৃষ্টি কতক সর্বনাশ।
পুলিশের সাথে খণ্ডযুদ্ধ, কাঁদানে গ্যাসের সেল;
আগুন লেগেছে পুলিশের ভ্যানে মানুষেরা উদ্বেল।
ভিড় ঠেলে ঠেলে তার মাঝে যাই, তোমার খবর নিই
চোখ মুছে নিয়ে কত কত দূরে চোখে কিছু দেখে দিই।
বর্ণনা শুনে ভয় পেয়ে যাই মনটা উঠেছে কেঁদে-
তুমি বুঝি আর বেঁচে নেই সোনা অথই এ সমুদ্রে।


টিভির সামনে দাঁড়াতে পারিনি, পড়িনি খবরকাগজ;
যা বোঝার সে তো বুঝেই গিয়েছি, বোঝা যে কত সহজ।
মেয়েটি প্রথম কেঁদে উঠেছিল টিভির খবর শুনে-
সবাই আমরা বুঝে গেছি প্রিয় এবার ততক্ষণে।
তাকাতে পারিনি তোমার দেহেতে কান্নায় ফাটে বুক
কেমনে তোমায় বিদায় দিয়েছি আর এ কি সোনামুখ!
তোমাকে ছুঁয়েই শুধুই বলেছি কঠিন সর্বনাশ-
পরের সে কথা সকলই জানা সবটাই ইতিহাস।
               ---------
** চলবে।