সুফিয়া মমতাজ (কাব্যগ্রন্থ) : ৩৯ (২০/১১/২০১৮) অংশের পর-


           ।।৪০।। কাঁদতে পারিনি সেদিন
আগেও বলেছি- তোমায় সুফিয়া, আমার বাবার দিন-
ভীষণ কষ্টে শেষ দিনগুলি! কোথা যেন ছিল ঋণ।
জীবনের শেষে সে কটা বছর পেয়েছে ভীষণ কষ্ট;
নানান রোগেতে ভুগেভুগে বাবা, সব কিছু তার নষ্ট।
নানান জটিল রোগ ছিল তার সাথেতে মনের রোগ;
মিলেমিশে তার শেষের জীবন এতটাই দুর্ভোগ।
আমি যে জেনেছি, আমি যে দেখেছি, বাবার কাছেতে থেকে-
বাবাও বলিত শরীরের কথা আমাকে কাছেতে ডেকে।


আমি তো তখন কলেজ ছাত্র বেকার বেকার ছাপ-
সেই দিনগুলি আমার কাছেতে এখনও যে অভিশাপ!
সেই দিনখানি ভীষণ মনেতে সদরের হাসপাতাল-
আমি বসে আছি বাবার পাশেতে বড়ো বেশি বেসামাল।
বাবাটি আমার অচেতন হয়ে পড়ে আছে বিছানায়-
শুনতে পারছে, হয়তো বা কিছু, না বলার অবস্থায়।
ও শরীর যেন শীতল হয়েছে আমি বসে দেখি সব;
মা- আর দিদি বাইরে তখন কোথা বুঝি কলরব।


বাবার হাতটা ধরে আছি আমি তখন অনেক রাত-
কিছুক্ষণ পরে আসিবেই বুঝি আবার নবীন প্রভাত।
বাবার চোখটি একবার যেন খুলে গেল অবশেষ-
অক্ষিগোলক থেমে গেল যেন, চলে গেছে কোন দেশ।
ওটাই যে ছিল জীবনের সাড়া এখন জীবনহীন;
সব কিছু যেন শেষ হয়ে গেল, বাবা ছাড়া এই দিন।
সেদিন যে আমি কাঁদতে পারিনি ভেঙে পড়িনি কিছু-
সাথে আছে মা-, দিদি বুঝি আছে, জীবন সবার পিছু।


জীবনে সেদিন প্রথম কষ্ট, কষ্ট পেয়েছি চোখে-
তবুও যে আমি কাঁদতে পারিনি সেদিনের সেই শোকে।
আমি যদি কাঁদি সারা বাড়িময় কেঁদে যাবে বুঝি সব-
সেই ভয়ে আমি কাঁদিনি তখন বাড়িতে হয়নি রব।
নীরবে দিয়েছি বাবার সমাধি হাজার বেদন সয়ে-
বুকের ভিতরে কান্না যে জমা আমি তবু সংশয়ে।
আজ তাই প্রিয় মনে পড়ে গেল সেদিন দুঃখের টানে-
আজকে তোমার বেদনারোদন রাখি বলো কোনখানে।
            ------------
** চলবে।