ধরিত্রী
✍- উজ্জ্বল সরদার আর্য


           রূপকার-রূপায়ণ করিয়াছে
                   ধরিত্রী বুকে,
           কে-যেন করিল জীবন দান
               সৃষ্টি-সুখে আমাকে।
         হে-দেবী দুনিয়া আমারে রচিয়া
             পূর্ণ হইলো কি মনস্কাম?
         চতুর্দিক ঘুরিয়া হেরি-হেন রূপ
             ভুলিবার নহে তব নাম।
        প্রাণ জপিয়াছে-জপ, শোঁক-তাপ-
                  এসো-- ভুলি!
         সকলে মিলিয়া পূজিব তাহারে
              চলো যাই কমল তুলি।
          হই লুণ্ঠিত-নত করি নম-নম
                    করজোড়ে,
            হারাই শত ভক্তির ভিড়ে-
               তুচ্ছ পূজারী আমি!
          কি করে তোমারে করিব তুষ্ট
                চির সজ্জিত তুমি।
            ফুল-ফল নদী ভরা জল
            স্থলে করি মোরা বিচরণ,
      সমীর-সুগন্ধ ছড়িয়েছে দিকে-দিকে
          অন্তরে তোমারে করি আপন।
          আজি যাহা কিছু সুন্দর হেরি
                   সব তোমারি
                ঘুরি দিক-দিগন্তে,
         তব সৃষ্টি তুমি-মোর্ অন্তর্যামী
           একদিন মিশিব তোমাতে।
        প্রভাতে আজি শুনি কত তব গান
                 জুড়াইল মম প্রাণ
        ধন্য ওগো ধন্য আমি হে-ধরিত্রী!
           মৈত্রী বন্ধনে বেঁধেছ আমায়
         মম মনে জেগেছে অনন্ত ভক্তি।
           প্রণাম লহ মোর জীবনভর
    তোমারে যেন করিতে পারি সেবা-দান,
           যাহার চরণে পেয়েছি ঠাই
         তাহার চরণে সঁপেছি এই প্রাণ।


             সুখ-দুঃখ-তৃষিত মাঝে
                পেয়েছি প্রেম কত,
            শস্যশ্যামলে ভরেছে ধরণী
                 মুগ্ধ হই অবিরত।
             বাদলের ধারা-ঝর্ণার জল
                 সব করেছ ধারণ,
          তৃষিত হইলে আসি দলে-দলে
              জলাশয়ে ডুবি সর্বক্ষণ।
           হে-ধরিত্রী, মাতৃ বন্দনা করি
                 তুমি জননী মোর্
          তব বুকে রজনী আসে-উল্লাসে
              রবি আসিলে হয় ভোর।
             নিদ্রিত নয়ন জাগিয়া ওঠে
                   পাখি করে গান,
          ফুলের কুঁড়ি পাপড়ি মেলে দেয়
              প্রজাপতি করে অমৃত পান।
        শান্ত-সুশীতল ছায়া হরিৎ অরণ্যে
                     যায় পাওয়া
                 বায়ু বহে তব বুকে,
              গ্রহ-নক্ষত্র সকলে মিলে
             সাজিয়ে তোলে তোমাকে।
                  চাঁদ দিয়েছে আলো
              দিবসে রবি করে ঝলমল
     নিশুতি-নিশিতে অন্তরীক্ষে উদিত হয় তারা,
           তোমার শুষ্ক-তৃষিত-ক্ষত অন্তরে
                 বাদল ঝরায় জলধারা।
            প্রভাত-সন্ধ্যার দুই রূপ দেখিতে
         নির্জন-নিভৃতে বসে থাকি অকুল নয়নে,
              কখনো নবীন কখনো প্রবীণ
               কখনো পথ হারাই রাতে।


           জানি-যেতে হইবে চলে একদিন
                     ছেড়ে তোমারে,
             সময়ের অন্তিমে অর্যমা ডুবিবে
                তবু থাকিব প্রতীক্ষা করে।
                জনমে-জনমে আসিতে চাই
                  ঠাই যেন পাই-তব বুকে,
          হে-ধরিত্রী!ধন্য করেছ আজি আমাকে।
                তুমি যাহা কিছু করেছো দান
            তাহা অমৃত সমান ঋণী তব কাছে,
           কেহ আসে কেহ যায় তবু তুমি অক্ষয়
            অমর প্রেম অনন্তকাল থাকবে বেঁচে।
                  ওগো-তুমি এত যে সুন্দর
                দেখিতে চাহে সকলে বারবার
                      স্বর্গ থেকেও উত্তম,
             গঙ্গা-যমুনা-কাবেরী এসেছে তাই
               দিয়েছ আসন জানিয়ে স্বাগতম।
               আজি জল স্রোতে তুমি উথলিত
                  সিন্ধু লহরীতে ক্ষত-বিক্ষত
                 তবুও হেরি তব পুলকিত প্রাণ!
                  হিংসা-বিদ্বেষ অহংকার নয়
                        নয় যুদ্ধ-জয়-লয়
             আত্মত্যাগে পেয়েছ তুমি শ্রেষ্ঠ সম্মান।


                  তাই তব বুকে বাসা বেঁধেছে
                            কত নর্-নারী,
                     দেখিতে সুন্দরী-তব সৃষ্টি!
                গড়েছ দেশ কত আমি পুলকিত
                         মেলেছি আকুল দৃষ্টি।
                    শুধু দেখিতে চাহি তোমারে
                     উঠিতে চাই পর্বত শিখরে
                  কি করে করো এত ভার বহন,
                    শত-শত জীব বসবাস করে
                  তব বুকে খাদ্য খোঁজে সর্বক্ষণ।
              হে ধরিত্রী! দেবী সতী-সাবিত্রী-আমার
                  যাতনা সয়েছ তবু ভালবেসেছ
                     ঠাই দিয়েছ অন্তরে বারবার।
                            তবু যেন কারা
                   তোমারে করিতে চাহে সর্বহারা
                          দহন দগ্ধ করে বুকে,
                       যাদের দিয়েছ চরণে ঠাই
                  তাহারা ক্ষতবিক্ষত করে তোমাকে।
                  উহারা লোভী -ভোগবিলাসে মত্ত
                   নির্লজ্জিত কুকর্মে দিচ্ছে পীড়িত,
               তবু সয়েছ তুমি মুখ বুঝে শত অন্যায়!
                       সৃষ্টির ভার কত নেবে আর
                        অকালে বিনষ্ট হচ্ছ ক্ষয়।
              যেখানে স্বয়ং প্রকৃতি তোমারে দেয় প্রীতি
                          দাসী হয়ে করে সেবা,
                    আজি ক্ষুদ্র মনুষ্য করে বীভৎস
                ওগো আমি জানি তুমি দেবতার-দেবা।



✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
রচনাকাল, ১ নভেম্বর ২০২০ সাল,
বাংলা-১৫ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, রবিবার।
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।