..                        (চতুর্থ সর্গ)
          
           হে পার্থ, যখন তুমি আত্মজ্ঞান করবে প্রাপ্ত
                   স্বয়ং তখনি হতে পারবে যুক্ত-
                             আমার সাথে!
              তবেই পরমাত্মা রূপে দেখবে নিজেকে
                        চিনতে পারবে আমাকে
          অন্তর দৃষ্টিতে এগিয়ে যাও মোক্ষলাভের পথে।
                  আর এই পথ প্রাপ্তি করার হেতু
                       আমার প্রতি হও সমর্পণ,
                    হবে লক্ষ পূরণ - ভক্তি যোগে!
                   আমি'ই পরমাত্মা সৃষ্টির বিধাতা
                 আমার করুণায় ঘুমন্ত আত্মা জাগে।


                ‘‘হে মাধব, কাকে বলা হয় সমর্পণ?
                     বলুন আমায় করবো শ্রবণ,
            জেনেছি আপনি ঈশ্বর অংশ আমি আপনার
                  বাস্তবে করতে চাই আপনার দর্শন।’’


                ‘‘মানুষ যখন ত্যাগ করে সংকল্প সমস্ত
                   স্বয়ং এর জন্য করে না প্রতিজ্ঞা,
                               নেয় না সিদ্ধান্ত-
                  মনের এরূপ স্থিতি র নাম সমর্পণ!


              অর্থাৎ যে প্রকারের কার্য তাকে দেওয়া হয়,
                  সে সেই প্রকারের কার্য করে যায়-
                              বুঝি হে জনার্দন?’’


                       বাস্তবে সমর্পণের প্রকৃত অর্থ
                               জানবে হে পার্থ,
                      যদি তুমি রাখো হৃদয়ে আমায়!
               নিজে-নিজেকে, নিজের মনকে, বুদ্ধিকে,
            জ্ঞান, ইচ্ছা ও আশা'কে আমাতে করো অর্পণ,
                     তবেই করবে পরমাত্মা দর্শন -
               আর এই সমর্পণ কেই ভক্তি বলা হয়।
        
            ‘‘পিতা-মাতার উপরে থাকে সন্তান সমর্পিত,
                       পত্নী পতি'রে করে পূজিত-
                              প্রাণ সমর্পণে;
                         শিষ্য করে গুরু ভক্তি,
                      যোদ্ধা'র সমর্পণ সেনাপতি,
             তবে কি সমস্ত ভক্তি এক প্রকার এখানে?’
                  এই ভক্তিতে হবে কি ঈশ্বর প্রাতি,
                         মুক্তি হয় কি আত্মার?
                 বলুন আমারে হে জনার্দন এবারে,
                        আমি কি করবো এবার?’’
                
                     মানুষ যার প্রতি হয় সমর্পিত
                   করে তারে অন্তর দিয়ে পূজিত,
                    তারি অনুরূপে গড়ে ওঠে সে!
            নিঃসন্দেহ-না তো প্রশ্ন, না হয় ঘৃণা উৎপন্ন,
                      কেবল তারি ভালোবাসে।
                  যদি সমর্পণ হয় দুরাচারীর প্রতি
                        তবে হয় উভয়ের ক্ষতি,
                          যেমন হয়েছে কর্ণ!
              অধর্মী দূর্যোধনকে নিয়েছে হৃদয়ে এঁকে
                  তার আদেশে কর্ম করছে জঘন্য।
                   তাই হে ধনঞ্জয়, বলছি তোমায় -
                     সমর্পিত হও উত্তমের প্রতি!
            তবেই হবে চরিত্রবান,খুঁজে পাবে ভগবান,
                      পাবে শান্তি মিলবে মুক্তি।
                জল দেখতে একি হলেও স্বাদে ভিন্ন,
                     দূষিত-বর্জিত-সাগরে লোনা,
                মিষ্টি ঝর্ণা জীবন ধারণে সে অনন্য।
                    তাই ভক্তি হক সে যতপ্রকার
                  সব-সমর্পণে পায় না পরমাত্মার,
            শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম ভক্তি হক ঈশ্বরের প্রতি
                       এটাই চাওয়া আমার।
                
                   ‘‘ এই ভক্তি কি রূপে করা হয়
                              বলুন আমায়,
                    তবে কি সমর্পণ'ই ভক্তি নয়?
                    
            না অর্জুন, সমর্পণ ভক্তির প্রথম পদক্ষেপ
                হৃদয় হতে সরিয়ে ফেলো আক্ষেপ,
                      আজ করো তুমি প্রলয়।’’
                 ভক্তি কেবল এক মানুষিক স্থিতি
                   রাখো পরমাত্মার প্রতি প্রীতি,
                     কিছু আছে আবশ্যিক'তা!
          যে-যব,তব,যাগ-যজ্ঞ,সংযম-নিয়ম ও শ্রদ্ধায়
                    অন্তর কে শুদ্ধ করে নত নয়,
                       সেই খুঁজে পায় বিধাতা।
            
                 ‘‘যদি ভক্তি হয় মানুষিক স্থিতি
                      তবে যব-তব আদি-প্রতি
                             কি মাহাত্ম্য?


            ধৌত করা পাত্র কাল যে রূপ ময়লা হয়,
                 সে রূপ মন ও পরিবর্তন হয়ে যায়
                   তাই নিরন্তর স্মরণ করার জন্য
                       এগুলি দরকার  হে পার্থ।’’


             ‘‘কিন্তু ভক্তির সাথে সাংখ্য, কর্ম, জ্ঞানের
                              সম্পর্ক কি?
                 জানতে  অশ্রুজলে তোমায় ডাকি-
                           বলুন হে জনার্দন!

             সাংখ্যযোগ কারণে মানুষ নিজেকে জানে
               আর কর্মযোগে মানুষ মুক্ত হয় বন্ধন।’’
                      জ্ঞানে আসে অন্তরে ভক্তি
                           ভক্তি'তে পায় মুক্তি,
                  শচিনন্দন সরূপকে করে প্রাপ্ত!
                   তাই মিলিত হয়ে পরমাত্মায়,
                         পরমাত্মা হয়ে যায়-
                    আঁধার সরিয়ে ছড়ায় দীপ্ত।


                   ‘‘ তবে এই শরীর, মৃত-ধীর,
                        নেই কি এর মাহাত্ম্য?


                 অবশ্যই আছে, পরমাত্মার কাছে-
              এগিয়ে যেতে হয় শরীর নিয়ে হে পার্থ।’’
             মৃত্যু এবং নতুন জন্মের অন্তর বর্তী সময়ে
                 আত্মার জ্ঞান, বিচার, হয় না বৃদ্ধি!
                    তাই আত্মার উন্নতি ও অবনতি
                     শরীরে থেকে পূর্ণ  হবে সিদ্ধি।


                 ‘‘তাহলে এখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের
                           যদি বধ করি ওদের
               তবে কি উদ্ধার সম্ভাবনা নষ্ট করবো না?


                      শত্রুগণ করেছে ধর্ম উল্লঙ্ঘন
                   তাদের উদ্ধার এখন আর হবে না। ’’
          যদি এখনো এদের অপরাধ করতে দেওয়া হয়
                     এরা করবে সব ক্ষয়-অন্যায়,
                               ঘটাবে পতন ;
                    তাই অধর্মী'কে করো প্রতিহত
                         থাকো নিষ্কাম কর্ম রত,
                   করো ওদের  করুণা হে অর্জুন।
                     ওরা মরবে না, ক্ষয় হবে না,
                     শুধু ত্যাগ করবে এই শরীর!
               নতুন দেহ ধারণ করে নতুন পথ ধরে,
             জনমে জনমে খুঁজবে পরমাত্মা শান্তির।
               যখন মানুষ জেনে যায়, যে সে অক্ষয় -
                      দেহ একটি ভূমি খণ্ড মাত্র,
                          অর্থাৎ এটি ক্ষেত্র!
                 আর সে শরীরে বসবাস করি
                        পরমাত্মা অধিকারি,
                 একে ক্ষেত্রজ্ঞ বলা হয় হে মিত্র।
          আর তখন আত্মা শরীরের তিন গুন সরিয়ে  
                        স্বত্ব গুন কে জড়িয়ে
                      সমর্পণে হয় ভক্তি যোগী!
               আর অবশেষে পরমাত্মায় মিশে যায়
                         হয়ে কর্ম ফল ত্যাগী।
              ভক্তি যোগের একটিই সারাংশ পার্থ,
                          ত্যাগ করে স্বার্থ -
                জীবনকে পরমাত্মা'কে অর্পণ করা!
          আর স্বত্ব গুণের সম্পত্তি'কে সযত্নে হৃদয়ে রেখে
                    ছড়িয়ে দিতে হয় অমৃত ধারা।


                 ‘‘ সত্ত্ব গুণের সম্পত্তি,সেকি ভক্তি-
                             না অন্য কিছু?
             বলুন আমারে ভক্তিতে-লুণ্ঠিত হলাম এবারে,
                    জ্ঞান অর্জনে আছি আপনার পিছু।’’
              
                  স্বার্থ হেতু হিংসা করা কাউকে মারা,
                            হে পার্থ সে অধর্ম!
                 তুমি জেনে নাও আমাতে সমর্পিত হও
                            অহিংসা পরম ধর্ম।
                সত্য, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য করতে হবে ধার্য,
                  তবেই হবে পূর্ণতা এসব স্বত্ব সম্পত্তি!
              অহংকারী ক্রোধিত, অধর্মী সুখ আকর্ষিত-
                           মনে আসে না ভক্তি।
                 তাই স্বত্ব কে ধরণ করে ভক্তি ভরে
                     করতে হবে পরমাত্মা সাধন!
                 ধর্মের স্থাপনায় হও মায়াহীন নির্ভয়
                          করো কর্তব্য বহন।
                    যে ফলের আশা ত্যাগ করে  
                  কর্তব্য পালন করে জীবন ধরে
                       আমাতে ভক্তি রেখে!
                 আমি তাকে সন্তোষ প্রদান করি
                        বক্ষে জড়িয়ে ধরি
           মৃত্যুর পরে অগ্রসর হয় আমার অভিমুখে।



✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
রচনাকাল ১৪ মে ২০২০ সাল,
বাংলা ৩১ সে বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার)
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।