কালের যাত্রাপথে
     ✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য


          নদীর ওপারে দাঁড়িয়ে কে ডাকছে ওরে?
            বিদায়-বেদনায় বুক থেকে রক্ত ঝরে,
                        অশ্রু ঝরছে নয়নে!
            স্বজন লাশের ভার নিতে পারি না আর
                দুঃখের সাগরে ডুবি ক্ষণে-ক্ষণে।
            যেদিকে তাকাই শুধু লাশ দেখতে পাই,
               আমিও যাবো কালের স্রোতে ভেসে!
            ওরে আর কত মরবে কোভিড উনিশে?
                    বিষে ক্ষয় পৃথিবীর প্রাণ,
            কে কাকে বাঁচাবে? কে কোথায় যাবে?
                 বাতাসে শুনি কেবল মরণ গান।
             একাকীত্ব-নির্জনতা ঘরে বন্দী বিধাতা
                শুধু শান্ত-সুশীতল-সমীর যায় বয়ে,
                  সুনীল আকাশে রবি ওঠে হেসে
                তবু আঁধার থেকে যায় অন্তর ছুঁয়ে।
                
                  কি করে হবে আর ধরণী বিশুদ্ধ?  
                          ক্রুদ্ধ আজ প্রকৃতি!
                   সে-সাজতে চায় হয়ে অক্ষয়
                     বিলিয়ে দিতে চায় প্রীতি।
             গীতি থেমেছে তৃষিত অন্তরে,বদ্ধ ঘরে -
                      থাকবে জনতা কতদিন?
                আছে অনাহারে শুধু কেঁদে মরে
              লক ডাউন ভেঙে হতে চায় স্বাধীন।
              আজ সকলে চেয়েছে এক মুঠো খাদ্য,
                চিকিৎসা,ওষুধ, প্রয়োজনীয় দ্রব্য-
                   বাঁচার আশায়-আশ্রয়ে বন্দী!
              চোখের জল করে মুক্তির কোলাহল
                তবু নেতা-নেত্রী-মন্ত্রী করে ফন্দী।
                     করুণ পীড়িত সেই দৃশ্য
                থেকে যায় গোপন  হাস্য-রহস্য,
               দুয়ার খুলে কেউ দেখতে চায় না!
         দান দিতে নয় রাজ্য-সম্পদ লুট করে খায়
           ওরা চোর-ঘুষখোর বাড়িয়েছে খাজনা।


         জনতা পায় না খেতে, তবু ওরা আছে মেতে-
                         আনন্দন উৎসবে!
              কোটি-কোটি টাকার স্তূপ গড়েছে
                 ক্ষমতার অপব্যবহার করছে
                    শুধু নীরহ জনতা মরবে।
             জন্মেছি তো মরার জন্য ওরা অনন্য
               সুখো নিদ্রামগ্ন আছে অট্টালিকায়,
        ওরা দেশ সেবক নয়,ভণ্ড স্বার্থপর করে লয়-
                      বিচার চেয়েছি আজ!
      ওই ভয়ঙ্কর মহামারী ছড়িয়েছে বিশ্ব-বিদর্ভ নগরী
            তবু ওদের নাই কোন চক্ষুলজ্জা-লাজ।
             ওরে পশু-পাষণ্ড করতে হয় লণ্ডভণ্ড
                      তোদের লোভনীয় দেহ্,
                         জাগে অন্তরে দ্রোহ-
                           এই করুণ দিনে!
           সকল সংগ্রাম শেষে নির্মল সুনীল আকাশে
                   বাজবে জয় ধ্বনি শত্রুদলনে।

              আজ লোভ-লালসায় ডুবে থাকা নয়
                   শুধু প্রাণ বাঁচাও প্রাণ বাঁচাও,
                এই বজ্রধ্বনি সকলে কানে শুনি
               তবু কোন পিপাসায় পথ ভুলে যাও?
                    ওরে তোমরা বুঝি মরবে না,
                        আর কত হবো লাঞ্ছনা?
                    আজ সকলের ডাক এসেছে!
                 যেতে হবে চলে বিদায় বন্ধু বলে
            নির্জন বনে মরণে কত স্বজন ঘুমিয়েছে।  
                কেউ অনাহারে কেউ রোগে হেরে
                      সময়ের কাছে পরাজিত,
            আমি হয়েছি সকল অন্যায়ের কাছে দলিত-
         যত দুর্ভিক্ষ-পীড়িত-নিষ্প্রাণ ছবি এঁকেছে শিল্পী
                      লিখেছে কবিতা কবি,
             হার মেনে যায় এই মহামারীর কাছে!
               শ্মশান জ্বালিয়েছি কবর খুঁড়েছি
                    হেটে চলেছি মৃত্যুর পাছে।



রচনাকাল, ১৭ জুন ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
বাংলা- ৩ আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, বুধবার।
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।