আদিখ্যেতা
           ✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য


পৃথিবীর লক্ষ-লক্ষ কোটি-কোটি জনতার সম্মুখে
সজ্জিত রঙ্গমঞ্চে দাঁড়িয়ে একদিন বলেছিলাম,
তোমরা ‘মা’ কে ভালোবাসো?
প্রত্যুত্তরে ধরণী কম্পিত হয়েছিল মাত্র একটি শব্দে,
‘ভালোবাসি-ভালোবাসি-ভালোবাসি’।
                
তবু সেদিন আনন্দে অশ্রুপাত হয়নি আমার,
কেবল স্মিত হেসে বলেছিলাম ভালোবাসা
অন্তরে অঞ্জলি দানে প্রকাশ পায়,
প্রকাশ পায় সমর্পণ, আত্মনিবেদন ও ভক্তিতে।


আমি বাস্তববাদী মানুষ,
তাই কেবল মুখের ভাষাতেই তুষ্ট না হয়ে
সমগ্র-সন্তানের ভালোবাসা দর্শন হেতু,
পথিকের বেশে পথরেখা ধরে হেটে গিয়েছি
দেশে-দেশে, দিক-দিগন্তে।


কিন্তু যত দূরেই যাই, চোখে ঝরে বেদনার অশ্রু!
আমি নিস্তব্ধ,  জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে আমার মন,
কম্পিত দেহ,রুক্ষ তৃষিত ভূমির ফাটলে চলতে পথে
আমার চরণ আজ আটকে যায়।


ভালোবাসায় সবকিছু উজ্জীবিত হয় জানি,
কিন্তু ক্ষয়-লয় ব্যবহারের পাত্রী হয়েছে জননী।
তিলে-তিলে গড়েছে যারে সেই চেনে না আজ তারে,
দিয়েছে কতই না আত্মবলিদান!
সর্বস্বান্ত-নিঃসঙ্গ হয়ে মা আছে বিদায়ের পথ চেয়ে,
তবু করছে সন্তানের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসার গান।


আজ কেন মাকে দেখি অনাহারে মৃত লাশের মত
পড়ে থাকতে?
বস্তুহীন, চিকিৎসা হীন,রুক্ষ-তৃষিত-পীড়িত দেহে
তাকে কাঁদতে?
মায়ের শেষ আশ্রয় কেন হলো বৃদ্ধাশ্রম?


বাধ্য শিশুর মত ‘মা’ এখন সন্তানের কাছে শাসন-
শোষণের পাত্রী।
একা-একটা বন্দী ঘরে তাকে রেখে দেওয়া হয়েছে,
এ-যেন আধুনিক জেল খানা।
তাহলে আজ কোথায় সেই ভালোবাসা?
কোথায় তোমাদের আত্মদান?


দিন গুনে বছর পেরিয়ে একদিনের জন্য
মাতৃভক্তি দেখানো এত ‘আদিখ্যেতা’।
অন্তরের প্রেম-সমর্পণে মাতৃভক্তি রচিত হয়,
কোন নিদিষ্ট সময় অনুযায়ী প্রেমের প্রদীপ জ্বালানো হয়
স্মৃতি মিশ্রিত আত্মাহীন কোন ছবির উদ্দেশ্যে।



✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
রচনাকাল, ২১ জুলাই ২০২০ সাল,
বাংলা- ৫ শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার।
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।