ঝরা ফুলের কাব্য
      ✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য


      গহীন নিস্তব্ধ রাতে যখন তোমার ক্লান্ত মন
      আপন গৃহে শান্তির পরশ শরীরে মেখে
      ঘুমিয়ে থাকে স্বজনের পাশে,
      তখনো রোড লাইটের আলোয় ঝলমল
      করতে থাকে ক্ষুধার্ত-পীড়িত-তৃষ্ণার্ত
      এই সজাগ শহর।
      সেখানে দাঁড়িয়ে কখনো কি দেখেছ
      অন্ধকার আকাশে জ্বলে থাকা লক্ষ নক্ষত্র,
      আর শুনেছ কি তাদের অন্তরের বেদনার কান্না?


      আজ ওরা উল্কার মত ঝরে যেতে চায়
      বিলীন হতে চায় ধরণীর বুকে ঘুমিয়ে জেতে
      চায় চিরতরে।
      তবুও বিক্ষুব্ধ সময়ের সমুদ্র তীরে আছড়ে পড়া
      ঢেউয়ের শব্দে আর জাগাতে চায় না
      হৃদয়হীন মনুষ্য সমাজের।


      কেননা পরাজিত অসহায় দুখী অন্তরের
      কান্নার ধ্বনি আকাশে-বাতাসে সমগ্র পৃথিবীতে
      ছড়িয়ে গেলেও তা তোমাদের কানে
      কখনো পৌঁছাবে না।
      কারণ তোমাদের চার দেওয়ালে আজও
      ফাটল ধরিনি, জানালা গুলি অবরুদ্ধ দুষিত উত্তপ্ত
      বাতাসের ভয়ে।
      ক্ষুধা নেই, দারিদ্র্যতা নেই, গৃহহারা-স্বজন হারা
      নও তোমরা।
      গরমে এসি, আর শীতে গরমের কাপড়
      গায়ে জড়িয়ে, চায়ের কাপে চুমু দিয়ে
      এঁকেছ বিলাসিতার ছবি।
      
      কিন্তু কখনো কি হেমন্তের অন্ধকার রাতে
      ঝরে পড়া পাতাদের গল্প শুনেছ?
      পথে পড়ে থাকা অবহেলিত বস্তু ভেবে
      কতই না দলিত করে চলে যাও,
      প্রতিবাদ করিনি - করবো না আর কোনদিন।
      পথে পড়ে থাকা পড়া রুটি, ছড়ানো মুড়ি,
       আর পচা-বাসি খাবার পেলে ভুলে যাই সব!
       আনন্দে নেচে ওঠে ক্ষুধার্ত-পীড়িত-রোগগ্রস্ত হৃদয়।


       জানি, ঝরা ফুলের কাব্যগ্রন্থের পাতা খুলে
       কখনো দেখবে না এই অবহেলিত ক্ষত
       কবিতা কে,জড়িয়ে ধরবে না বুকে।
       তবু বেদনা ভরা মনে অশ্রুসিক্ত চোখে
       রক্তের কালিতে লিখে রেখে গেলাম
       ক্লান্তিহীন-মায়াহীন করুণা শূন্য সজাগ শহরের
       দুর্বৃত্ত আত্মার অমানবিক আচরণ কথা।


রচনাকাল, ৫ এপ্রিল ২০২১ খ্রিস্টাব্দ,
বাংলা ২২ চৈত্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, সোমবার।
দাকোপ খুলনা বাংলাদেশ।