দীর্ঘ দিন থেকে দেখছি তোমায় এই ছোট্ট কুড়ে ঘরে,
কেমনে থাকো একলা তুমি এই নির্জন কুটিরে?
আর সকলে কোথায় গেছে তোমায় একা ফেলে?
পাকা গোঁপের তলে জেঠু মুচকি হাসি দিয়ে -
       বলে    ওরে আমার পাগোল ছেলে,
কে বলেছে তোরে আমি থাকি একলা এই ঘরে?


উষা - অম্বরে  শুক - সারীরা কতো এসে বসে অটবির            
              ডালে,
কিচির মিচির আওয়াজ তুলে কতো গান
             করে,
তাই তো থাকি পড়ে এই কাননের তরে।
নক্ত এলে জোনাকিরা আসে বাতি নিয়ে সাথে,
নিত্য নতুন খেলা করি সারা রাত ওদেরি সাথে।
আমার হাতটি ধরে বলে তখন বয় আমার পাশে,
আজ আমার জীবনের গল্প শোনাই তোর মাঝে।


আমি ছিলাম বাবা - মা'র একটি মাত্র ছেলে,
আদর করে ডাকতো আমায় হর্ষের নামে।
আমি দশ বছরে দিলাম যখনি পা,
কলেরা এসে আমার আর বাবার মাঝে দিল দেহান্তের  বেড়া।
লোচনের সলিলে  বুক ভাসিয়ে, ঘৃত মধু গায়ে মাখিয়ে,
সাজাইলাম তার নতুন সাজে -
পুষ্পের মালা গোলায় দিয়ে!!
চন্দনের দোলনা বানিয়ে শুইয়ে দিলাম তার চিরতরে -     ওই পুকুরের পাড়ে।


মা যে আমার চিন্তায় কাতর,
            নয়ন দিয়ে ঝরাতো কেবল গঙ্গা বাদল!
এক দিন আমায় বললো ডেকে  ওরে মোর খোকা,
এবার আমার শেষ ইচ্ছা - আমার বৌমাকে একটু দেখা।
গ্রামের উত্তর দিকে ছিল কদম তলার ঘাট,
সেই খানেতে একটি মেয়েছিল দেখতে  যেমন,
      তেমনি তার রূপের বাট।
ভালোবেসে  তাকে করলাম  জীবন সঙ্গী,
মন খুলে মা আশীর্বাদ করলো -
       বলে আহ্ কি সুন্দর -
নয়ন মেলে একটু ভালো করে দেখি।


কিছু দিন পরে মা আমাদের ছেড়ে স্বর্গের সিড়ি ধরে বেড়ে,
নতুন বধু বেশে সাজিয়ে তাকে, চিরদিনের জন্য শুবিয়ে দিলাম বাবার শ্মশানের পাশে।
চখের জলে কয়লা দিলাম ধুয়ে -
স্ত্রী এসে জড়িয়ে আমায় ধরে, বলে নিয়তির লেখা কে খণ্ডাতে পারে,
মা যে আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছে ঐ'কল্লোলিনীর ওপারে।


ওগো তুমি আর কেঁদনা -আমি আর পারছি না,
আদর সহাগ দিয়ে আমার মোনকে ভরিয়ে তলে!
দুঃখ কষ্টো দুর করে, চন্দ্রিমার  আলোয় নিকেতন ভরিয়ে  আসিল একটা ছেলে,
তাকে নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখতাম -
মোরা দুই জনে, দুই লোচনে।


নতুন করে জ্বলিয়ে ছিলাম একটি হর্ষের বাতি,
দুঃখের সমীর  এসে নিভিয়ে দিল সে বাতি!
খোকার মা যে চলে গেলো চিরদিনের জন্য আমাদের ছেড়ে,
পারলনা সাপের দংশন হাত থেকে বাঁচতে।
ঘাড়ে করে লয়ে নিয়ে গেলাম তটিনীর  তিরে,
কলাগাছের ভেলাই রেখে , চখের জলে বিদায় দিলাম চিরদিনের সঙ্গিরে।


এক দিন রাতে শুয়ে ছিলাম ঘরের মেজে খকা কে লয়ে,
হঠাৎ দানোবেরা এসে গুলি করে বন্দুক দিয়ে গ্রামের বুকে,
খকা ভয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে, আমি বলি এরা কেড়ে নিতে এসেছে বাংলা মাকে।
খকাতখনি লাফিয়ে ওঠে যুদ্ধো করে ওদের সাথে,
বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে এই বাংলা মাকে।
আজ আমি সব হারিয়ে হয়েছি একা,
তাই ঈশ্বরের কাছে দুহাত জোড় করে- করি প্রার্থনা,
সকলে ভাল থাকে যেন তোমারি কাছেতে,
এখন আমি দিন গুনছি কবে যাব চলে।


উজ্জ্বল সরদার
দাকোপ - খুলনা