মন্দিরেও আর বসা যাবে না একটু শান্তিতে
এমনিতে বাজার রাস্তা ঘাটে বেশি ঘুরি না
কিন্তু দেখছি এখানেও আমি নিরাপদ নেই
আমি বাইরের বলে মানুষ সব সময় আমার
ক্ষতিই করতে চায়


বাড়িতে আত্নীয় স্বজন আসলে
বাচ্চাদের হ‌ইচ‌ই চেঁচামেচিতে
বড়রা যেমন একটা কাজের কথা বলতে পারি না
আমি আসলেই যেন
কিছু মানুষের মন খুশিতে নেচে ওঠে
-‘মাস্টার আসসে- মাস্টার খাওয়াবে,
তখন এ আমাকে পেছন থেকে ডাকে
ও আমাকে নদীর ঘাটে সিঁড়িতে যেতে বলে
আমি পকেট থেকে প্যাকেট বের করে দেই
-একদিন- দুদিন -তিনদিন-
আমার পকেটে যদি না থাকে
তাহলে আমাকে কেউ খাওয়াবে না-এটাই বাস্তব


আমি সবাইকেই লক্ষ্য করি
মানুষ চিনতে আমি ভুল করি না
কেউ ডাকলেই সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে যাই না
কারন সে আমাকে খাওয়াবে একদিন
তারপর সে আমার কাছে খেতে চাইবে তিনদিন
খাওয়াতে পারলে ভালো না পারলেই আমি খারাপ
আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকাবে না
এসব মানুষের সাথে কিভাবে মেলামেশা করা যায়?


ওদের নিজেদের কারো কাজ করার কোনো ইচ্ছা নেই –
আমাকে দেখে ওদের কাজের কথা  মনে পড়ে
-'মন্দিরের এখনো কত কাজ বাকি আছে
যারা চাকরি করে তাদের মোটা চাঁদা দিতে হবে'


কেউ কেউ তো আমার এত‌ই শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে যায় যে
আমার ব্যক্তিগত খবর‌ তাদের না জানলে হবে না
- 'মাস্টার-ব‌উ কবে আসবে?
- ব‌উকে নিয়ে আসো নিয়ে আসো
-আমরা কি ব‌উমাকে দেখতে পারব না?
- ব‌উ কেন আসে না?
-এখানে আর একটা বিয়ে কর না কেন?'
সবাই মেকি ভালোবাসা দেখায়


এসব ব্যক্তিগত প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে আমি যখন
অন্য কারো যার পেছনে যাই
সে নিজের কৃতিত্বের কথা শোনায়-
-'আরে মাস্টার- তুই তো জানিস না,
এই মন্দিরটার জন্য কি না করেছি,
আমি শুনি কিছু বলি না
তো আর একজন বলে–‘মাস্টার–যে জমিটাতে মন্দির আছে
এই জমিটাতে আমার শুয়োরের ফার্ম ছিল,
এই দিকটায় নদীর এই পাড়ে কিচ্ছু ছিল না,
খালি কচু, জঙ্গল আর শ্মশান,
শ্মশান ছিল শ্মশান মহাশ্মশান,
আর আজকে মন্দিরে আমার কোনো দাম নেই!'
আমি শুনি কিছু বলতে পারি না
সবার কথায় কথা মিলিয়ে কথা বলতে পারি না
তারা হয়ত দুঃখ পায় আমাকে ওদের পছন্দ হয় না


যাদের আমাকে পছন্দ হয় না
তারাই আমাকে  কিছুক্ষণ পর পর শোনায়-
‘লকডাউন-লকডাউন-মন্দিরে বাইরের লোক আসা যাবে না'
ওখানেই ওরা ভিড়ে ঠাসাঠাসি
গায়ে গা লাগিয়ে সবাই গাদাগাদি
ওখানেই ওদের হঠাৎ করে ‘করোনা,র কথা মনে পড়ে যায়
- 'করোনা-করোনা, কাছাকাছি বসা যাবে না
ফাঁক হয়ে বসো- লকডাউন- লকডাউন'
ডাক্তারের থেকেও এরা বেশি জেনে ফেলছে খুব তাড়াতাড়ি
নিত্য নতুন নিয়ম তৈরি করে ফেলছে জন্মান্ধরা


আমি মনে মনে ভাবি এখানে আমি ছাড়া
আর তো কেউ বাইরের লোক নেই-
কথাটা ওরা আমাকেই শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে
আমি শুনি কিছু বলতে পারি না সাধারণ মানুষগুলোকে
ওরা নিজেরাই কেউ নিয়ম মেনে চলছে না


এখন দিনকাল খুব খারাপ
চারিদিকে খুন জখম আত্মহত্যা ধর্ষণ
ওরা সাধারণ মানুষ ওরা বেশি জানে না
সাধারণ মানুষ এখন গুজবে মাতে বেশি
বোঝালেও ঠিক ভাবে বুঝতে চায় না
উল্টা গুজব ছড়ায় তাই আমি কিছু বলি না
চুপচাপ বসে থাকি শুধু দেখি আর শুনি


কিছু কিছু মানুষ মন্দিরে ধর্ম করার জন্য আসে না
ধর্ম করার জন্য আসলে মন্দিরের দানবাক্স চুরি হয়?
কিছু কিছু মানুষ ভালো মানুষের মুখোশ পরে
সরল মানুষের সরলতার সুযোগ নিতে আসে


যখন তাদের স্বার্থ চরিতার্থ হয় না
তখন এরা ঝামেলা পাকানোর ষড়যন্ত্র করে
কেউ মন্দিরের দানবাক্স ভেঙে নিয়ে যায়
কারো দেশলাই কারো সামান্য হাওয়াই চটির
লোভ এরা সামলাতে পারে না এরা ছোট লোক
এরা কেউ ধর্ম করার জন্য আসে না
কোনদিন এরা আমাকেই চোর বানিয়ে দেবে
গনপিটুনি খাওয়ায় মত সাহষ তো আমার নেই
গনপিটুনিতে তো আর জীবনটা দিতে পারি না
      ______________