না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
শেয়ার আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।


আজকের পাঁচ কবির প্রতি আমার হৃদয়ের অকৃত্রিম উষ্ণতা নিবেদন! আর যাঁরা
কবি, হৃদয়-মেধা নিংড়ে কবিতা আনে এ কবিতার আসরে প্রত্যহ, যাঁরা এখানে
অবর্তমান  (‌হয়ত অপ্রস্তুত পাঠাভ্যাসে), সেই সব কবি-হৃদয়ের প্রতিও আমার
ভালবাসা অন্তহীন! তাঁদের হাতেও আমার কাব্যরস পান ও প্রত্যাশা নিরন্তর!
আগামিকাল আপনার কবিতার মূগ্ধতায় ডুবে যেতে চাই!


কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় - সৌকপা।


--------------------------------------------------------------------


মধ্যরাতে রাত নামেনা
- মুক্তি আর প্রেম মানুষের জন্যে


সন্ধ্যে বেলায় এখন আর আমার খোঁজ নিতে আসেনা কেউ
রাত বাড়লে চোখে মুখে ঘুম জড়িয়ে কেউ বলেনা - ভেতরে আসো
মধ্যরাতে আমাদের ঘরটা একা সঙ্কোচে পড়ে থাকে
                              দিন-রাত বুকের ভেতর,
দুপুর গড়ালে ওখানে এক কোণে  খেলা করে চিনচিনে ব্যথা
শিরদাঁড়া  বেয়ে পায়ের গোড়ালিতে নেমে ঠান্ডায় রক্ত প্রবাহ জমে যায়
                                  দিয়ে যায় এক বাগান অগণিত অস্থিরতা।


অথচ তুমি থাকলে সুর্য থেকে রক্ষনশীল আলো চুরি করে
চাদের হাসি আমায় লঙ্কা লতার মত কালির জিব দেখাত,
ভয় লাগতনা, যদিও ভয়ের মুখোশ পরে তোমার-ই মতো
                                 কেউ না কেউ আসত অঙ্গীকারবদ্ধ;
প্রতিদিনকার মতো, মুখোশ খুলে  তখন তুমি-ই লজ্জায় লাল হতে ,
এক আকাশ ভারি সীমাহীন উষ্ণ হাসি
উপহার দিতে কোনো কোনো দিন
                   আমি শীতল হতাম-
                          এক বুক পানিতে মাথা দেহ ডুবিয়ে ডুব  দিতাম -
                               ডুবন্ত আগ্নেয়গিরি হঠাত জেগে উঠে দেখতো খসখসে  
                              প্রমূখ দুঃখের লগ্ন নূপুর পরে খেলছে তোমার পায়ে,
                          ভালবাসার অন্তর্জলে আমাদের সাথে হেলেঞ্চার সখ্যতা দেখে
                            দ্রোহের জলে জ্বলন্ত পাপ এক লাপে দৌড়ে পালাতো।
                                                          তুমি আরও গভীর হতে


আমি উষ্ণ হতাম কোনো কোনো দিন
                          ডাঙায় উঠলে বুনো গাছি লতার ঠোট তোমার ঠোট বেয়ে  
                          বেয়ে উঠতো - পা থেকে মাথা পর্যন্ত
                          আকাশী বর্ণের লাবণ্য পারুল জড়াতো
                         এক থোকা বুনো স্বপ্ন সঙ্গম দিয়ে তোমার সিঁথিতে।
                                                      তুমি আরও অগ্রগামী হতে
                                                        


ভাসতে চাইলে ভাসাতে
আমাকে - ডেকে দিতে সাগরের গ্রীবায় জ্বলজ্বলে এক জীবনের উদাসীনতা -
অস্থিমজ্জা ছাড়িয়ে যেতো মহা সমুদ্রের দিকে -
শুধু উশৃঙ্খলতা মেখে আপ্লুত নমস্কার আমায় দিতো
মরণকে কাছে টেনে নেবার নির্জলা এক কূল অহংকার
                          এখন আর দেখাতে  পারিনা


সমুদ্রের লুটপাট খামচে ধরে এখন সাঁতরে  কূলে আসি না
রক্তাক্ত সমুদ্র যে আমায় এখনো একা একা মধ্যরাতে
দিনরাত খুন করে
                  
এখন আর আমার খোঁজ নিতে আসেনা কেউ
মধ্যরাতে রাত নামেনা আমাদের ঘরে আর।


০৫।০৪।২০১৩


--------------------------------------------------------------------


বহ্নি থেকে বহ্নির ভিতরে
- অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়


আজন্ম লালিত সৌধ ভেঙে চুরমার
কোন্ দিকে নিয়ে যাবি তুই বহমান স্রোত।
কত চালাকি দেখাবি নিগূঢ় অঙ্কে
কতদিন আগে তোর মনে আছে কি
পিঠে পিঠ রেখে তোর সঙ্গে জমিয়েছি ভাব
                             কত বর্ণাঢ্য ভঙ্গিমায়
ভুলেছিস সব কালে-অকালে বেলা-অবেলায় !


দহনে দহনে আমি মরি পাথর-যন্ত্রণায়
যেমন মরে মরে পাথর হয় সমুদ্র-প্রবাল …
রক্তে এখন দারুণ শঙ্খ বাজে শঙ্কায় শঙ্কায়
আগুনের হলকা অহর্নিশি ছিঁড়ছে ফুল, পাতা
তোরই জন্য যা রক্ষিত ছিল, প্রজ্ঞা সময় …
হায় পাখি, রাত্রি জুড়ে কী বিপজ্জনক
                                      তোর ওড়াওড়ি রে !


আজন্ম লালিত সৌধ ভেঙে চুরমার
এইভাবেই ভেঙে যায় কত কী !
কোন্ দিকে নিয়ে যাবি তুই বহমান স্রোত
                                  ছৌ-নাচ দেখাবি আমায় ?
দেখিস একদিন চলে যাব অনেক দূরে
যাব বহ্নি থেকে বহ্নির ভিতরে।


--------------------------------------------------------------------


হে ঈশ্বর! তোমার ডায়েরীর পাতা উল্টে দেখ
        - ছোট কবিতা


এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
ছয় দিন পর এক সাত হয়!


হে ঈশ্বর!
তোমার ডায়েরীর পাতা উল্টে দেখ - কতটা পাপ -
অগ্নিশিখায় ছিল না কোন ইচ্ছার পাপ; -
তধু অনিচ্ছায় পুড়ে যায় সব পথ - পথাকার
লতা-পাতা-ঘাস, জল, নদীজলের সংসার!


এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
সাত দিনে এক দিন কিছু নয়!


হে ঈশ্বর!
সব ইচ্ছা পুড়ে যায় প্রবল অনিচ্ছায় -
শেষ বিকেলের রিক্সা পুড়ে যায়
উদ্যানের সবুজ পথ পুড়ে যায়
লেকের স্বচ্ছ জল পুড়ে যায়
পার্কের সৌখিন বেন্স পুড়ে যায়; -
এক দিনে আর পুড়ে যাওয়া কতোটা নেভানো যায়?


হে ঈশ্বর!
পুড়ে যাওয়া কয়লায় চলে তিন প্রহরের রান্না
পুড়ে যাওয়া কয়লায় বাড়ে ভুল বানানের কান্না!


এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক দিনে কিছু কথা জমা হয়!


হে ঈশ্বর!
তুমি স্পষ্ট হবে কবে আর - কোন কালে -
এখানে স্পষ্টতা ঝুলে অন্ধকারের ডালে!
দেখ ধোঁয়া উঠছে কিনা ডায়েরীর পাতায় -
একঘেয়ে আগুন জ্বলছে কিনা সমূহ সংজ্ঞায়?


--------------------------------------------------------------------


জরিনার লবণ ভর্তা
- মনিরুল ইসলাম মনির


নদীর জলের দিকে তাকিয়ে জরিনার মনে হল,
বিকেলটা আজ বৃথা গেল তার ।
পাথরের উপর শাণ দেয়া ধারালো মুখ
কত কথায় বলা যেত ঝগড়া করে
প্রতিদ্বন্দ্বীও আছে পাশে, অথচ ইস্যু নেই হাতে
ঝগড়া না করলে ঘুম হয়না তার, এটা সবাই জানে ।


শেষে ইস্যু একটা পেল বটে, কিন্তু
ঝগড়া করার উপলক্ষ্য কি তৈরী করা যাবে তাতে ?
তবুও বলেই ফেল্ল, বাড়ীতে আজ
তরকারীর খুব অভাব ছিল, ভাতের সাথে তাই
লবণ সিদ্ধ দিয়ে শেষে ভর্তা করে খাই ।
একথা শুনে একজন ক্ষীণকন্ঠে বল্ল, লবণের
কি আর ভর্তা খাওয়া যায় ? আগুনের
তাপে গলে সেতো পানি হয়ে যায় ।
এবার আর যাবে কোথা ভাই, ঝগড়ার
একটা মওকা পেয়ে, কপালের চামড়া উপরে তুলে
বল্ল, হতচ্ছাড়ী, পোড়ামুখী, লবণের ভর্তা যদি আমি খাই
তাতে তোর কি আসে যায় ?


জরিনার লবণ ভর্তার গল্প হয়ত এখানেই শেষ হয়ে যেত
কিন্তু ছুটির দিনে অবরোধ আর হরতালের না বলা কথা রয়ে যেত ।
যেখানে দেশ আমার, ক্ষমতা আমার, শক্তি আমার
সেখানে ইতিহাসকে উল্টোপথে চালিত করার অধিকারও আছে আমার ।
তাতে তুমি বলবার কে ?


--------------------------------------------------------------------


কবিতা লিখা যায় না
- কবীর হুমায়ূন


কাব্য কথায় লিখবো না কিছু আর,
কবিতায় চলে কীটের অত্যাচার।
চারিদিকে জ্বলে আগুনের লাল শিখা,
যে যার মতোই দেখাচ্ছে অহমিকা।
জনতার নামে চলে নোংড়ামী সব-
ধ্বংসের উৎসব।
জ্যান্ত মানুষ আগুনে পোড়ায় মানুষ-বিবেক নাই,
রাজনীতি নাকি লোভী কুকুরের বেলেল্লাপনা, ভাই!
বেশ্যাকে বিশ্বাস করা যায়- রাজনীতিককে নয়,
বেশ্যা কখনো আদরে তাকায়
রাজনীতিবিদ দেখায় শুধুই ভয়।
ধর্মের নামে রাজনীতি করে
ধর্মকে করে কালো,
জনতার চোখে ঠুলি দিয়ে তারা
নিজ-বিত্ত বাড়ালো।
কবিতা লিখবো কিভাবেই বলো আর-
কবিতার মতো জনতার ’পরে
চলছে অত্যাচার।


--------------------------------------------------------------------