না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
শেয়ার আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।


আজকের ১০ কবির প্রতি আমার হৃদয়ের অকৃত্রিম উষ্ণতা নিবেদন! আর যাঁরা
কবি, হৃদয়-মেধা নিংড়ে কবিতা আনে এ কবিতার আসরে প্রত্যহ, যাঁরা এখানে
অবর্তমান  (‌হয়ত আমার অপ্রস্তুত পাঠাভ্যাসে), সেই সব কবি-হৃদয়ের প্রতিও
আমার ভালবাসা অন্তহীন! তাঁদের হাতেও আমার কাব্যরস পান ও প্রত্যাশা
নিরন্তর! আগামিকাল তাঁদের কবিতার মূগ্ধতায় ডুবে যেতে চাই!


কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় - সৌকপা।
--------------------------------------------------------------------


বনসাই
- মুক্তি আর প্রেম মানুষের জন্যে


একা থাকলে -  বয়স বেড়ে যায় মাতাল স্মৃতি ও সাদা মৌনতার
এক ঝাঁক নিঃসঙ্গতা ডানা চেপে নুইয়ে পড়ে
সাদা বয়সের দায়ভার,
দায়গ্রস্থ করাল প্রেমের ধূসর ক্ষরণে -
যে কূল দুঃখ আর জড়তায় তুমুল প্রণোদিত আজও  
এমন উত্সব বুনো তান্ডবে প্রজার খাজনা দুই পয়সার
তালুতে চেপে রাজার মতো কে বাজাতে পারে,
কাঁচা বয়সের মৌনতা পান করে কে দেখাতে পারে -
যে গ্রাম - উঠোন - ধানক্ষেত - বোনের আদর ভালো লাগতো
অবিকল বাল্য প্রেমের ভুল যুগ প্রামাণ্য।


এক বয়সে একাকীত্ব শুয়ে থাকে  - শরীরে শরীর বিছানা পেতে
এক বয়সে ভালো লাগে অষ্টাদশীর অট্রহাসি
                                 চোখ বুলাতে,
গোল্লাছুট আর লাটিম সেই বয়স দশ থেকে ঘুরাতে ঘুরাতে
প্রৌড় বটমূলে পুণরায় পল্লবিত আমিই সত্যবদ্ধ -  
জরাগ্রস্থ ভেতরে ভেতরে  পুড়ে মরা এক অবাক  ভাস্কর্য।
পঞ্চাশে পেরোলে একাকী বয়স ছিঁড়ে খায় অতীত - বর্তমান
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন আহত আপ্লুত রাতগুলো,
সত্তর এ গেলে কি থাকে বাকি, কে বলতে পারে -
                         নিরাশ্রিত কুঞ্জে চির হরিত ফুল ফুটবে আবার
                         রাজারাণী খেলা খেলবে বাল্যকাল;


একাকী বয়স আট কুঠুরি নয় দরোজার ফাঁক গলে
কোনো এক দিন হয়ে যায় আটপৌড়ে  ক্লান্ত মানুষ।


--------------------------------------------------------------------


নিখিলেশের ডায়রী -১০ শেষ পাতা।
- নাইবা গেলো জানা


মুখে রাখো এই প্রেম নিভৃতের ঘরে
এলোমেলো নিম কথা বেদনার ভারে
শুনিয়েছে এত কাল এত লক্ষ লোক
হৃদয় খোঁড়া দহন আর মৃত শোক
এগিয়েছে হাত ধরে, লক্ষ চলা পায়ে
গন্তব্য পাল্টে যায়, অনাবশ্যক দায়ে ।


হাতে হাতে, ব্যারিকেড, ধ্বনিত সংলাপ
আদায়ে নেমেছে প্রহরী আজ বিঘ্নিত আলাপ
সকলেই চায় স্বাধীনতা সকলেই চায় রাজ্য
সকলেই খোঁজে নিমন্ত্রণ আরাম আর ভোজ্য ।


আমার পৃথিবী হারিয়ে যায়, আমার পৃথিবী,
আন্দোলন নেই, নেই ঘোষিত স্বাধীনতা, নেই চাপানো পরাধীনতা
এখানে দিনের ২৪ ঘণ্টায়, তোমার নিমন্ত্রণ আছে,
মেপে দেখ, জোর নেই, নেই কামান গোলা - চোর শাসক।


আমার ২৪ ঘণ্টায়, একটিও মুহূর্ত তোমায় নিয়ে নয়  
তোমার ২৪ ঘন্টাও কাটুক শুধু তোমার হৃদয় খুঁড়ে।


---------------------------------------------
আমার ৯০ বছরের বাবা, ক্যান্সারের ঘরে বসেই
বিধাতার বুকে এঁকেছিল...তীব্র অবিশ্বাসের ক্যানভাস,
দেশের আইন ...তাকে... মৃত্যুর আগেই ফাঁসি দিয়েছিল।
---------এটাই তো শেষ লাইন কয়েকটা।


--------------------------------------------------------------------


অভিধান
- ত্রিচরণ


পৃথিবী এক নিত্য খুঁজবার অভিধান
পৃথিবী এক প্রত্যহ পাবার অভিধান
পৃথিবী এক প্রত্যহ হারানোর অভিধান।


--------------------------------------------------------------------


দহনকাল
- চন্দ্রশেখর


তুমি যখন ডাঙ্গার উপর ভিজছ
আমি তখন কোমর জলে পুড়ছি
তুমি যখন বহুতলে উড়ছ
বস্তি ঘরে আমি সাঁতার কাটছি।


সময় যখন তরতরিয়ে ছুটছে
স্তব্ধ মোটর-রেল বা বিমানযাত্রা
প্রতিবিম্বে নখের আঁচড় কাটছি
শূণ্যে ঝুলছি, হারিয়ে যাচ্ছে মাত্রা


এখন তুমি কোমর-জল পুড়ছ
অগ্নিপথের রথে সওয়ার ভিজছি
দহনকালের এই তো জীবনযাত্রা
আমরা সবাই একই সঙ্গে জ্বলছি…


--------------------------------------------------------------------


স্বপ্ন দেখা ঘুম
- আহম্মেদ রফিক


সাত সকালে সেই স্বপ্ন দেখা ঘুম
যে ছবি লুকিয়ে রাখি দেখে না কেউ
কতটা অবাধ্য কেউ আমার মাঝেই
হাতড়ে ফেরে


ভবিষ্যৎ হাতড়ে ফেরা সেই আমিই আজকাল
অতীত খুঁজে বেড়াই
অভয়ারণ্যের সেই সব হরিণ মৃগনাভি কস্তুরি
খুঁজে খুঁজে অবশেষে নিরাশ হই


সেই স্বপ্ন দেখা মন আর আগে বাড়ে না কিছুতেই
আত্মসম্মানবোধ অথবা বিবেকের প্রশ্ন
নির্বিকার
বিষাদে জ্বলে পুড়ে ছাই হয় অনুভব
ঠিক এই বুকেই বিঁধেছিল বুলেট
এইখানেই সেই রক্তের ধারা বহমান আজো


হিসাবের খাতা খুলে যখনই দেখি কালো রাত
অন্ধকারে পিশাচেরা খেলিছে ঢের
বড় নাদুস নুদুস চেহারার সেই হিস্যা
স্বপ্ন দেখা ঘুম , যার
ভিতরে জেগে থাকে ভোগবাদী অদৃশ্য কেউ


--------------------------------------------------------------------


ক্যানভাস
- অভিজিত্‍ শেঠ


প্রতিটি রাত্রি,স্বপ্নের বালুচরে হেঁটে বেড়াই।
কখনও নীলাভ,কখনও বা সবুজের হাতছানি।
কোকিলের কুহু ডাক,চড়ুই এর অবাধ বিচরণ।
ঝিঁঝিঁর প্রবল হুংকার,
জোনাকিই মৃদু আলো,পথের দিশারী


ঘুমটা আজ হঠাত্‍ ভেঙ্গে গেল...


নিঝুম রাতে কোনঠাসা কিছু আম আদমীর ডাক শুনি,
শূন্য প্রান্তরে।
দেখি অ্যাকোরিয়ামের সব লাল,নীল মাছ ঘুমিয়ে আছে।


দূরে কোথাও যেন চেলাই এর ঠেক্ বসেছে,
রাম,ভোদকা,হুইসকির বন্যা।


জল খেয়ে দেখি,বিস্বাদ তার স্বাদ।
হঠাত্‍ চোখ পড়ে ১টা বেজে গেছে।
ঘুমোতে গিয়ে দেখি,
বিছানায় রঙের আকিঁবুকিঁ হঠাত্‍ জীবন্ত হয়েছে।


ক্যানভাসে তুলির টান।
শুধু রক্ত আর রক্তের দাগ মিশেছে।
কন্টকময় ফুল আকাঁ,
জীবন্ত হয়ে উঠেছে ক্যানভাসে।


--------------------------------------------------------------------


ইশারা
- আসিফ আন্দালিব


তারারা তোমায় চোখ টিপে টিপে ইশারাতে
কি বোঝাতে চায় ফাল্গুনের এ মধু-রাতে
জানি না তো তুমি বোঝো নাকি আজ বোঝো না তা।।


কার প্রেম আজ বিষাদ-মলিন জোছনাতে
ভিখারীর মতো লুটায় তোমার আঙিনাতে
কার তরে এক হয় না এ দুচোখের পাতা
জানি না তো তুমি বোঝো নাকি আজ বোঝো না তা।।


প্রকৃতি নিয়েছে কার আবেগের রঙ-তুলি
শুকনো পাতার মর্মরে কার কথাগুলি?


কার সাধ আজ তোমার ফুলের বাগিচাতে
ফুটতে চাইছে না-ফোটার ব্যথা-বেদনাতে
তোমার কথায় ভরে কার কবিতার খাতা
জানি না তো তুমি বোঝো নাকি আজ বোঝো না তা।।


--------------------------------------------------------------------


জীবন গণিত
- রিপন গুণ


সিঁড়িভাঙায় ভাঙতো পাঁজর,চোখের পাতায় সর্ষে
পাটিগণিত পরিপাটি- হিসাব দেখনদারি,
এ্যালজেব্রার জেব্রাক্রসিং, বাঘ লাফিয়ে মরছে
ত্রিকোণমিতি মিথ্যে - মনের কোণায় মহামারী !


অঙ্ক শিখেছিলাম যখন, তখন আমি বাচ্চা
কে সি নাগের গেরোয় ভরা কট্টর নাগপাশে--
এখন বেবাক বুঝতে পারি,প্রেম ফুটো চৌবাচ্চা,
আর কিছু নয় জীবন - বাঁদর, তেল মাখানো বাঁশে !!!


--------------------------------------------------------------------


এই কৃষ্ণচূড়ার ঘাসে
- মৄত্তিক মাসুম


আফ্রোদিতি, তুমি নগ্ন হও এই বাংলার অর্ঘ্যগালিতে
আজ বসন্তের সবটুকু আমি পান করবো
ফালগুনির হাতে


মনরো, ঐ ঠোঁটে কে এঁকেছিল বেলাভূমির অমন টকটকে সূর্য
সে আসুক, দেখে যাক কী লাল জ্বলছে স্বপ্নীল
ফালগুনির সমস্তে


না, থাক, বরং প্রিয়া এসো, এই কৃষ্ণচূড়ার ঘাসে
বসি কিছুক্ষণ, থাকি আরো
কিছুক্ষণ একসাথে -
সন্ধ্যাতারার হাতে সব গল্প তুলে দিয়ে
ঘুমোতে যাবো স্বপ্নের সমস্ত রাতে -


এই শব্দেরা খেলে যাক পৃথিবীর অভিধানে


--------------------------------------------------------------------
১০


অদেখা সমীপে
- সুশীল রায়


অদেখা, তুমি কি এভাবেই চিরকাল থেকে যাবে দূরে?
কাছে আসবে না? ধরবে না হাত? সুরে
সুর মেলাবে না ?   -পাশাপাশি; মুখোমুখি ?
-এই যদি ছিল মনে তবে কেন লিখে দিলে আঁকিবুঁকি
অবোধ-কবির অন্তরে? এসো; এসো একছুটে প্রাণে,
-হৃদয়ের ঘরে বসবাস করি, ফুলে-ফলে,আঘ্রাণে।


--------------------------------------------------------------------