ডাইনী
এখানে পৃথিবীর বয়স কম,
এখানে গণতন্ত্র মানে
টুঁটি-টেপা টিপসই।
এখানে প্রতিবাদ ফলিডলে ধুয়ে যায়,
এখানে স্বস্তির মানে উড়ো খই...
মাথার ভেতরে উনুনের আঁচে
পুরোনো ক্ষত খুলির মত ফাটে
হুহু দরজা বন্ধ হয় সপাটে;
শণের মত চুল দাউ দাউ করে ওঠে
ওই যে, ওইতো মেঘের মত নখে
ডাইনী চরকা কাটে।
পোড়ো ঘরে
বিজ বিজ করে আসা-যাওয়া –
এতগুলো বছর,
সূয্যি পিঠে খেত-ফেরত-মরদ,
বাঁজা মাগিটার ছেলে হওয়া;
ছেলেটা মলো দশে,
মড়কে নিল,
মরদটাকে সাপে;
বেহুলার ঘুঙ্ঘুর গাঙ্গুরে ভাসল
ডাইনীর অভিশাপে।
ও শরীরে রক্ত আছে নাকি?
পাংশুটে বিষ-ঝাড়
জ্যোৎস্নার বাণে বাঁশি হয়ে বাজে
ঝাঁঝরা পাঁজরের হাড়।
কড়াইয়ে পোড়ে
মুরগির ছাঁট, দু এক মুঠো নটে,
পরবের লাল-পেড়ে-কাপড়, বসন্তকাল,
স্লেট হাতে শিশুর কঙ্কাল,
কাশবন...
এত কিছু পুড়ে ছাই, ডাইনী,
তবু পুড়ল না তোর মন?
চোখের গর্ত দিয়ে
শেয়ালের মত
গাঙের বুড়ো হাওয়া হাত বাড়ায়...
ধ্বক করে জ্বলে ওঠে উনুন,
দাবানল মেঠো পথ মাড়ায়-
ছোঁ মেরে নিয়ে চলে গেরস্থের উঠোন,
তুলসীতলা,
ঘুমন্ত লাঙল, রংপেন্সিল, রাশের মাঠ,
যাত্রাপালা;
ওই তো, ওই যে
আগুনের উজানে
সূয্যি পিঠে মরদটা
অন্ধকারে ছুড়ে মারছে
সোহাগের কথা,
ছেলেটা কেমন জোয়ান হয়েছে,
তবু ক্লান্ত...
প্রদীপের আলো-ছায়ায়
রেখেছে ডাইনীর কোলে মাথা-
কতগুলো বরষা গেল, কত্তগুলো ফাগুন
নেভে না কিছুতেই তবু
উনুনের হাড়-হিম আগুন।
তোরঙ্গে ভরাট শূন্যতা
কিছুটা শ্রাবণ আগলে রাখে,
খুদার্থ আয়নায় আছড়ে পড়ে
ডাইনী শিশু মুখ-চোখ ছুঁয়ে দেখে...
এখানে
চাঁদের মানে আলপথ
রোদ্দুরের মানে ফসলের ছাই
এখানে
ছুটির মানে চলে যাওয়া রেলগাড়ি
এখানে
নদীর নাম ডাইনী
এখানে
শোকের মানে স্রোতে ভাসমান ঘড়ি...
ভাস্কর চক্রবর্তী