এইখানে, এই খোলা মাঠের মধ্যে
চাপ চাপ রক্তের যে ছাপ পরে রয়েছে !
মিতালী জানে ওগুলো এক সময় দেহেই ছিল,
ডাক্তারের পথ্যি মতে চব্য চোষ্য লেহ্য পেয় পেয়ে
রক্তেরা উদ্বৃত্ত হয়ে যাচ্ছিল । হৃদপিন্ডের গ্রহন বর্জন
শিরা ধমনীর সংবহনে মাঝে মধ্যে উল্লাস করে
রক্তচাপে জানান দিচ্ছিল ; সে অসুস্থ ।
পরশু সারা রাত আকাশে চাঁদ ছিল,
তারাদের মিটমিটে আলোতে মায়াবী সাজে
আকাশ পথের দৃষ্টি বেয়ে নেমে ছিল
ফুল শয্যার রূপালী রাত, তার পরের আরও দশটি বছর,
গর্ভপাত, দুটি প্রসব রাত এবং শেষ সেই অমাবশ্যার রাত
যেখানে শারীরিক অক্ষমতার সংস্কৃতির দোহাই ছিল তুচ্ছ
স্বামী তার ঘামে ভেজা ক্লান্ত দেহ বালিশে রেখে চোখ মুদেছিল,
আর কোনদিন কথা হল না কথাগুলো কেড়ে নিল পক্ষাঘাত ।
বেশ কয়েক বছর গেল নদীতে জোয়ার এল,
বসন্তে কোকিল গাইল অনুরাগের গান, মিতালীর
জীবন জুড়ে এখন শুধুই বিরহ , নীরব যৌবন নিস্প্রান ।
লাল পলাশেরা ভ্রুকুটি করে দুধে আলতা রঙের অহংকার,
ঝরা কদম ফুলে পা পিছলায় সৌন্দর্য্য ম্রিয়মান ।
সোনালী ফসলের মাঠ দোলা খায় হৈমন্তী বায়
হেমন্তের মিতালী বুক আগলে ধরে গোলা ভরা ধান ।
বীজের ধানের অঙ্কুরোদগম ক্রমশঃ বেড়ে উঠার উচ্ছাস
আগাছার ভীড় বাড়তে দেখে মোচর খায় কোমল বুকে
প্রশ্রয়ের সীমারেখার অজ্ঞতা কেড়ে নেয় মানবতা ,
বাধার দেয়াল টপকে অপোগন্ড ঘরে ঠাঁই দেয়
আঠাশের যুবক এক অসমবয়সী বন্ধু ।
আথিতেয়তার অকৃপনতায় পৌষ্টিক আহারে
বন্ধুর পানাত্যয়ে বাল্যঘুমে বিভোর যখন পুত্র ;
মিতালীর বুক জুড়ে ধুঁ ধূঁ প্রান্তরে খাঁ খাঁ রোদ্দুরে
কচি ডাবের জলের কুমতলব ব্যর্থ সামাজিক ব্যাভিচারে,
একদা অজ্ঞাতে রাতের কালো গায়ে মেখে
মেতে ঊঠেছিল সুখের শ্রাবন ধারাতে ।
মরা গাঙে বানের ডাকে এইখানে,
এই খোলা মাঠের মধ্যে
চাপ চাপ রক্তের ছাপ পরে রয়েছে ।