আজকে জামাই ষষ্ঠি । এই জামাই ষষ্ঠি নিয়ে আমার ছোট বেলা থেকেই একটা বিরাট কৌতুহল ছিল । কেননা আমরা বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও আর পাঁচটা পূজার মত আমাদের ঘরে এই ষষ্ঠির পুজা হতো না । আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি, তখন আমাদের বাড়ীর পুকুরের উত্তর্পাড়ে একটা বিরাট জিউল গাছ ছিল, সেখানে গরমের দিনে প্রতিদিন নিয়ম করে যায়না এমন মানুষ পাড়ায় খুব কম ছিল । এই ষষ্ঠির দিনে, সকাল ১০ টার দিকে হঠাৎ দেখলাম , আলতা দিয়ে খুব সুন্দর করে লেখা একখানা পোষ্টার সাঁটা রয়েছে , যাতে লেখা রয়েছে "এখানে জামাই ভাড়া পাওয়া যায়"। আমার মতো আমার বাড়ীর অভিভাবকরাও বুজে গেছিলেন এটি আমার কাকু ও তার বন্ধুদের কাজ, সবাই খুব হাসা হাসি করেছিল, তখন আগাগোড়া কিছুই বুজলাম না, কিন্তু পাশের বাড়ীর ঘনিষ্ট বন্ধু রঞ্জু (রঞ্জয়) দের বাড়ীতে দুপুর বেলায় নিমন্ত্রন থাকতো এই দিনে, আরো অনেক লোক আসতো উনারা জামাই, সকলকে লাইন ধরে বসিয়ে মাথায় ফুল দুর্ব্বা দিয়ে প্রান ভরে আশীর্বাদ করতেন জেঠীমা তার পর ফল, মিষ্টি, দই, মাছ, মাংস ইত্যাদি ইত্যাদি খাওয়ার ধুম পরে যেত । আজ অনেক দিন পরে, আমি আমার শাশুড়ীমায়ের সামনে যখন ষষ্ঠি নিতে বসলাম, এক লহমায় সে সব দিনের কথা মনে পরে গেল, যদি জামাই হিসেবে এই ষষ্ঠি নেওয়া মার জন্য এবার নতুন নয়, নতুন যা তা হল এই আড্ডায় শেয়ার করতে পারবো কথাগুলো, এই বিষয় টা ।
   আজকের এই অত্যাধুনিক যুগেও বিবর্তনের ঘেঁরাটোপে থেকে বাঙালীরা কিন্তু তার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে আকড়ে ধরে রেখেছে বলা যায় । হিন্দু সমাজের যে কয়টি কৃষ্টির জাঁক জমক দিনে দিনে বাড়ছে বৈ কমছে না সেগুলোর মধ্যে এই জামাই ষষ্ঠিও একটি বলা যায় । ধরন ধারন, রীতি নীতি কিছু কিছু পরিবর্দ্ধন ও পরিমার্জন করা হলেও জামাইদের জামাই ষষ্ঠি লোপ পায়নি একথা হলফ করেই বলতে পারি । পঞ্জিকার দিন ক্ষন লগ্ন এসব বাদ দিলে জামাই শাশুড়ীর লেন দেনের বিষয় টা আজকাল আন্তরিকতার চাইতে বাহ্যিক আড়ম্বরতার দিকেই বেশী খেয়াল রাখে , কেউ কেউ আবার এই জামাই ষষ্ঠির সাথে ভাঁই ফোটার পরিপূরক চিন্তা ভাবনাও করে থাকেন । আর যাই হোক, এই ষষ্ঠিতে শশুর মশাইদের বাজারে ইলিশ কিনতে গেলে টাক মাথার যে অসহায় চেহারাটা চোখে পরে সেটাকে আজকাল অনেকেই অনেক ভাবে বিশ্লেষন করে রম্য বা তির্যক ভাবে আলোচনা, লেখালেখি, নাটক , গান ইত্যাদি সবকিছুর একটা ভাল উপাদান হিসেবে পেয়ে থাকেন বলা যায় । আমিও আজকের দিনটা আমার পরিবারের সব্বাইকে নিয়ে একেবারে ছুটির আমেজে (যদিও সরকারী ছূটি নাই) খুব আনন্দ ফুর্ত্তিতে কাটিয়েছি । বৎস্রের এই একটা দিন আসে আমার জন্য , যখন আমি আমার শশুর বাড়ীর সকলকে একসাথে কাছে পাই । যাদের বাড়ীতে জামাই নেই মানে যে বাড়ীতে মেয়ে নেই, সে বাড়ীর কষ্ট মাখা মুখ খানা দেখলে আজকে জামাই ভাড়া'র রসিকতাটার মাধুর্য্য মনে পরে ।
বন্ধুরা আমি আমার মনের কথা খুলে বললাম, আশাকরি ভাল লাগবে, আমার সঙ্গে আপনিও শেয়ার করতে পারেন আপনার আজকের দিনের ভাল লাগা মুহুর্ত ।