একবার এক খরস্রোতা স্রোতস্বিনী  তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে পা রাখলো আমার অনুর্বর উঠোনে।
স্বেচ্ছায় প্লাবিত করলো আমার অন্তরের আঙিনা,মাঠ,ঘাট,বিরান ভূমি সব।
অমৌসুমে এত শান্ত বান আমি আর কখনো দেখিনি।
নদীর নৈঃস্বর্গিক দান যেন পুরোটাই ছিল শুধু আমার জন্য।
পানি খানিকটা কমতেই পলিতে ছেপে গেল আমার অনাবাদী পতিত প্রান্তর।
আমি এক অলস আনাড়ি চাষি।
সে যেন আমায় ঐকান্তিক আদরে রপ্ত করালো চাষের ষোলো কলা।
জেগে উঠলাম মৃতপ্রায় আমি।
সাথে সাথে জেগে উঠলো আমার আঙিনার আধমরা বারমাসি ডালিম গাছটাও।
পত্র পল্লবে ছেয়ে গেল আমার উঠোন।
আম্রকাননে নতুন মুকুল,রবি শস্যে ভরা ক্ষেত,বাহারি ফুলে সাজানো বাগান,ভ্রমরের গুঞ্জন,আর পাখির কলতানে মুখরিত আমার সদর ও অন্দর।
আমি পরিণত হলাম এক সুখি,সুঠাম, কর্মঠ ও সার্থক কৃষকে।
আর সেই রুপসী নদী-আবহমান কাল বয়ে চলেছে আমার বসত ভিটের সীমানা ছুঁয়ে নিবিড় মমতায়।
দূঃভাগ্য, হঠাৎ এক কালোরাতে কপাল পুড়লো হতচ্ছাড়ার।
একি চন্দ্রের কু-দৃষ্টি,নাকি কোন গ্রহের অদৃশ্য প্রভাব?জানিনা।
নাব্য নদী পরিবর্তন করলো তার সুশান্ত গতিপথ,আজন্ম আক্রোশে।
আজো সে বহমান,আমা হতে বহু ক্রোশ দূরে।
যার দানে যার প্রেমে একদা বাগান সেজেছিল, তা এখন পরিণত হয়েছে শুষ্ক শ্মশানে।
নতজানু আমি যেন প্রতীক্ষিত চাতক,অদ্যাবধি বসে আছি সেই মরা নদীর বাঁকে।
আজ ভালবাসার এই ভরা মৌসুমে শেষ মিনতি করজোড়ে,
সুপ্রিয় স্রোতস্বিনীর রব,
তুমি বৃহৎ,তুমি উদার।ক্ষমা করে দাও আমার যত অপরাধ যা অজান্তে করেছি আমি।
ভুলে যাও আমার অপারগতা আর অজ্ঞতা যতো।
ফিরিয়ে দাও পূনঃবার,প্লাবিত করে দাও আমার অশান্ত অন্তর।
যদি না ও রাখ দীর্ঘ কাল অন্তত শেষ বারের জন্য দাও।
তার মমতার জলে আমার সলিলসমাধি হোক,গ্রহণ কর আমায়।
মঞ্জুর কর আমার অন্তিম বন্দনা।
----------------+++++++++++++++-------------------