বেহুলা
              - ইয়ামিন বসুনিয়া


আচ্ছা!আমি সম্পর্কে তোমার কে হই বলতো..?
খুব আদর করে কি যেন একটা নামে ডাকতে এক সময়,
তাও ভুলে গেছি আজ।
কষ্ট হয় খুব,জানা অঙ্কটাই ভুল করি বারবার।
কিছুতেই মিলেনা জীবনের হিসেব।
প্রত্যাশাটা কি খুব বেশি ছিল আমার?
কখনোই তো চাইনি তুমি আমার জুতোর ফিতে বেঁধে দেবে।
তবে এতটুকু চেয়েছি,ঠিক পৌণে ন'টায় যখন অফিসের জন্য তৈরি হব আমি, তখন খুব যতনে আমার টাইয়ের নট টা ঠিক করে দেবে প্রতিদিন,
আর পিচ্চিটার অলক্ষ্যে শার্টের কলার খানিকটা টেনে ধরে কপালে এঁকে দেবে একটা গভীর চুম্বন....
তারপর সুটকেসটা বাড়িয়ে দেবে,
দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়াতে নাড়াতে বলবে,
"আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরবে কিন্তু"....
এইতো ছিল আমার চাওয়া...


যেখানে তুমি আর আমি বসতাম এক সময়,আমি এখনও সেখানে যাই-খুব যাই,বেলা-অবেলায়।
মুখোমুখি বসি আমি আর বয়স্ক সেই বিরহী আম গাছ।
নিঃশব্দ নিসর্গে ঝরা পাতা পত্তনের শব্দ শুনি মৌনতায়।
অদূরেই শুনতে পাই সেই ঝরা পাতাদের আর্তচিৎকার।
ছোট্ট একটা বাউরী বাতাসে ঘূর্ণায়মান পত্রকূল যেন যাত্রা শুরু করেছে মহাকাশের গন্তব্যে।
হাওয়া থেমে যাওয়ার পরের ইতিহাস তোমার অজানা নয়।
উপস্থিত দর্শকে হাসা হাসি,খুব মজা পায়।
কিন্তু আমি ভাবি ভিন্নকথা.....


একটা সময় তোমার উষ্ণ প্রেমের বাউরী বাতাসে আমাকে কোথায় উঠিয়েছিলে তুমি..!
আমি কিন্তু এত্ত উপরে উঠতে চাইনি কখনও,তুমিই উঠিয়েছ আবার ফেলেও দিলে তুমি-অকারণ।
সেই থেকে মরে গেছি আমি,মরে গেছে আমার নিষ্পাপ সম্পর্ক।


তবে আর সাপে কাটা লক্ষ্মীন্দরের শবদেহ কলা গাছের তৈরি ভেলায় এতটা বছর কি আশায় বয়ে বেড়াচ্ছ বেহুলার বেশে...?
চম্পক নগরের ঘাটে আর কবে ভিড়বে তোমার লাশ বাহী ভেলা?
এতদিনে যার গলিত গোশত পরিণত হয়েছে মাছের খোরাকে।
এখন অবশিষ্ট শুধুই রক্ত মাংসহীন একটা মানব কঙ্কাল।
মরার আবার জাত কি রে..!!
ফেলে দাও ওটা,পুড়ে ভষ্ম করে ফেল নয়তো মাটি চাপা দাও, অথবা সমাধিস্থ কর তোমার মৃত সম্পর্কের অবশিষ্ট হাড়-গোড়।
ভয় নেই, খুনের দায়ে কেউ তোমার বাদি হয়ে দাঁড়াবে না কোনদিন, কোনদিন না, কথা দিলাম......
------------------+++++++++++--------------