সে রাতে মায়ের বুকের দুধ মুখে নিতে ভুলে গিয়েছিল নিষ্পাপ শিশু।
নীড়ে ফিরতে ভুলে গিয়েছিল ভয়ার্ত কাক।
আচ্ছালাতু খাইরুম মিনাননাওম...
আজানের সুর ভুলে গিয়েছিল মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠ।
গন্ধ বিলাতে ভুলে গিয়েছিল বাড়ির পুরনো হাসনাহেনা।


আমি পনেরই আগস্টের কথা  বলছি।
হ্যাঁ,আমি সেই কলঙ্কিত শেষ রাতের কথা বলছি।
সে রাতে যখন প্রকৃতির বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমিয়েছিল সুনীল আকাশ,বাঙালির উপর একবুক বিশ্বাস রেখে নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা,স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বিশ্বাসঘাতক একটা কুচক্রী মহল তখনো ঘুমায়নি সেদিন।
তারা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে সাক্ষাত করতে এসেছিল স্বাধীন বাংলার রাষ্ট্রনায়কের সাথে।
উপঢৌকন হিসেবে সাথে এনেছিল দানবের মত কিছু ট্যাংক, আর্টিলারি কামান, রকেটলঞ্চার, স্টেনগান, রাইফেল আর অসংখ্য তাজা বুলেট।
অকস্মাৎ গর্জে উঠলো কামান।
স্টেনগান আর রিকয়েললেস রাইফেলের বুলেট বর্ষণে প্রকম্পিত হলো ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ি ও তার আশপাশ।


হতবিহ্বল জাতির জনক সিঁড়িতে নেমে আসলেন।
প্রগাঢ় বিশ্বাস আর ভালোবাসায় জানতে চাইলেন "তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাস"?
বিকট শব্দে শুরু হলো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গোলাবর্ষণ পুনর্বার।
ঘাতকের বাধ্য বুলেট মুহূর্তেই এফোঁড়ওফোঁড় করে দিল বাংলার কিংবদন্তি, বঙ্গবন্ধুর প্রশস্ত বুক।
দোতলার সিঁড়িতেই লুটিয়ে পড়লেন তিনি।
বাতাসে বারুদের গন্ধ ভাসে।
বিশ্বাসঘাতকার বিষবাষ্পে মিশে যায় ভয়ার্ত রাসেলের নিদারুণ আর্তনাদ।
বাইশটি তাজা প্রাণ নিমিষেই কেড়ে নিল ঘাতকের তাজা বুলেট ও উদ্ধত বেয়নেট।


যার উত্তোলিত এক তর্জনীর নির্দেশে প্রাণ দিতে নেচে উঠেছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালি।
যার মাত্র একটি হুঙ্কারে  নড়ে উঠেছিল পাকিদের মসনদ।
বছরের পর বছর পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শোষক শক্তির কারাগারে বন্দি থেকেও দক্ষ দাইয়ের মত জীবন বাজি রেখে যিনি পাকিস্তানের গর্ভ থেকে প্রসব করিয়ে ছিলেন স্বাধীন বাংলার মানচিত্র।
সর্বকালের সেই শ্রেষ্ঠ বাঙালির লাশ আজ ধুলোয় লুটায় নির্বিকার।
নিষ্ঠুর নির্মমতা আর অবহেলায় বুকের ক্ষরিত পবিত্র রক্তে হলি খেলে অর্বাচীন পিশাচের পরিধেয় বুট।
হায়েনাদের নৃশংস বর্বরতায় পৃথিবীর ইতিহাসে রচিত হল ঘৃণিত এক বিষাদের অধ্যায়।


হে বাঙালির পরম বন্ধু,
ওরা তোমাকে নিভিয়ে দিতে গিয়ে বরং শতগুণ তেজে তোমার চেতনা জ্বালিয়ে দিয়েছে প্রতিটি বাঙালির বুকে।
হে পিতা,
তুমি ছিলে, তুমি আছ, তুমি থাকবেই আমাদের অন্তরে অনিঃশেষ - অবিরত।
এই শ্বাশত স্বাধীন বাংলায় চিরকাল  পতাকা উড়বে মুজিবীয় চেতনায়।
আমি পনেরই আগস্টের কথা বলতে এসেছিলাম।
আমি আমার কষ্টের কথাগুলো বললাম।
----------+++++++--------