আজ প্রত্যূষে জেগে ওঠে মেম শুনিয়া কাহার বেল,
অগ্নি মুর্তি ধরি ওঠে তাড়াতাড়ি, যেমন বেগুনে তেল।
ধরা করি সারা,নেমে আসে ত্বরা, ভাংগিয়া দিগ্বিদিক।
রাগিয়া প্রশ্ন করে,কেন এত ভোরে, ভাংলি আমার নিদ?


কাপে অযাচিত, হয়ে ভয়ে ভিত,যুগল করিয়া কর,
কহে সাহেবারে,কাপা কাপা স্বরে,মাগো-বেলা এ যে দ্বি-প্রহর!
রাগী মহাশয়া, ত্যাগী দয়া মায়া,পাল্টা প্রশ্ন করে,
কে তুমি বল?কি চাহিতে হায়, আসিয়াছ মম দ্বারে?
ভিখারি!
কহে ক্ষীণকায়,চাহিয়া সে মা'য়,আকুল আকুতি করি,
সাত দিন হতে, দেখা নাহি ভাতে,ভুখা থেকে বুঝি মরি।


আরো কাছে আসি,কহে মেমে হাসি,বলে কি মিথ্যাবাদী?
হেথা হতে যা,ভেংগে দিব পা,ফের কভু দেখি যদি....
লাজ নাহি তোর,গায়ে আছে জোড়,দেব তবে এক ঘাঁ।
মাঠে কিবা জলে,ক্ষেতে কিবা কলে, কামাই করিয়া খা।


কহে দুখি জনে,সাহেবার সনে,কপল ভাসায়ে নীরে।
মনে বড় ব্যাথা,তারি কিছু কথা প্রকাশিব ধীরেধীরে ।
একদা আমার ছিল জমি জোড়,নহি আমি মিথ্যাবাদী,
ছিল জন-মান,ছিল সন্মান,বিশ্বাস কর যদি।
এক ছেলে মোর বয়স বড় জোড় বিশ কি পঁচিশ হবে,
পরি সম এক কন্যার সণে বিবাহ দিয়াছি সবে।
কি বলিব আর বিধাতা তাহার দেয়নি লম্বা আয়ু,
মটরের চাকা পিষিয়া তাহার কেড়ে নেয় প্রাণ বায়ু।
ছোট ছেলে মোর বেঁচে জমি জোড় পড়ায়াছি ডাক্তারি,
বিলেতে পড়ার কথা বলে গিয়া ফিরে নাই কভু বাড়ি।
পড়ি ডাক্তারি বিয়ে সাদি করি বেঁধেছে সেথায় ঘর,
পর জনে বাছা আপন করেছে, আপনে করেছে পর।


যমুনার জল করিছে অতল তিন বিশ ধানি জমি,
তারি সাথে হায় নিয়াছে ভাসায় ছোট মোর সোনা মনি।
ছিল এক নাও,ভেসে গেছে তাও,কড়াল স্রোতের টানে,
বাকি ছিল মোর বাপের কবর ভাংগিয়া গিয়াছে বানে।


জমি গেছে মোর গেছে ঘর দোর, আমি আজ পরবাসী,
সব খেয়ে মোরে ভিখারি করেছে যমুনা সর্বনাশী।
আমি আর বুড়ি করি ধরা ধরি ছাড়িয়া ভিটার মায়া,
আশ্রিত হই,ছোট ডেড়া পাতি,মোল্লা বাড়িতে গিয়া।
দু'বছর আগে পৌষ আর মাঘে শীতের কাপড় ছাড়া,
হাফানী রোগে ঔষধ বিনা সাথী মোর যায় মারা।
আমি শুধু বাকী, মরি ধুকি ধুকি,তব দ্বারে পাতি হাত,
ক্ষুধার জ্বলায় মরিতেছি মাগো,দাওনা দু'মুঠো ভাত।


শুনে জনাবা,বলে ওঠে বাহ! ফন্দি এঁটেছ বেশ,
মাফ কর মোরে,দেখ কোন দ্বারে,আজ মোর ভাত শেষ।
কহে ভিক্ষুকে,
তোমারে বিধাতা গড়িয়াছে নেতা,দিব নাকো অভিশাপ,
পাহাড় সমান ধন গচ্ছিত রাখি মোর কাছে চাও মাফ?
তেলে মাথা যতো,মিলে শতশত,ঢালিতেছ সবি তেল,
চুলহীন মোর নেড়া মাথা পরে,ভেংগে খাও সবি বেল।
মোর মতো জনে,রক্ত মাংস পানে গড়িছ অট্টালিকা,
মরনের পর লাশ খাবে তোর পোকা আর পিপিলিকা।


যাকিছু তোমার,তাতে মোর অধিকার দিয়াছে জগৎস্বামী,
বিচারের দিনে কানাকড়ি তার ছাড়িবনা বাছা আমি।
কোথা গেল প্রেম মানবের তরে,কোথা আজি মানবতা?
স্বার্থপরতা গিলিয়েছে সবি,সে সব কথার কথা।
যার আছে যতো, আরো চায় ততো,কেহ নাহি করে মায়া,
খোদা,বুঝ দান কর ধনী জনে তুমি, দীনহীনে কর দয়া।