নীলাদ্রিতার অপেক্ষায়
                  - ইয়ামিন বসুনিয়া
***************************
সেই কবে কলেজের করিডোরে তোমাকে শেষবার নীল শাড়িতে দেখেছি নীলাদ্রিতা!!
লাল পাড়,লাল আঁচল,বড় গলার লাল টকটকে ব্লাউজ আর গাঢ় নীল রঙের জামদানী শাড়িতে আবৃত তোমার বাইশ বসন্তের খরস্রোতা পাহাড়ি ঝর্ণা।
শর্ষে ফুলের হলদে মাদকতায় যার রাঙানো আপাদমস্তক।
স্ফীত পর্বত দ্বয়ের ফাঁকে সবুজ উপত্যকার ঠিক মাঝ বরাবর অতিক্রমকারী দীঘল আঁচলের সু-মসৃণ ভাঁজ-শৈশব স্মৃতির মতই আজও দু'চোখে সমুজ্জ্বল।
সেফ্টিপিনে আঁটা রঙিন ডানার ধাতব প্রজাপতিটা আজও যেন তোমার বাম কাঁধে বসা, ঠিক সেদিনের মত......
ভরাট যুগল পুষ্পিত ঠোঁটের নির্ঝর হাসি আর প্রশস্ত ললাট থেকে উদীয়মান সূর্যের বিচ্ছুরিত রক্তিম দীপ্তি আজও আলোকিত করে আমার হৃদয়ের বিবর্ণ ক্যানভাস।


ঠিক তখন থেকেই নীল রঙটা আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে নীলা।
আমি তোমার নির্মম প্রতীক্ষায় নিদ্রাহীন রাতের শেষ প্রহরে ফিরতি ট্রেনের হুইসেল শুনেছি কত......
আমি নীলাকাশের বিশালতায় তোমাকে খুঁজেছি দুরন্ত কিশোরের ঘুঘুর বাসা হাতড়ানোর অধীরতায়।
আকাশ শিলাবৃষ্টির অযাচিত বর্ষণে বিক্ষত করছে আমার বুকের পাঁজর।
আমি নীল সমুদ্রের গভীরতায় তোমকে খুঁজেছি পেশাদার ডুবুরির ঝিনুক থেকে মুক্তো আহরণের দক্ষতায়।
সমুদ্র আমায় শতবার বিধ্বস্ত করেছে প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাসের করাল থাবায়।
আমি তোমার হাসির ঝংকার শুনবো বলে উদাস চিত্তে ঝাউবনে কান পেতেছি কতবার....
বৈরী বাতাসে ঝাউবন আমাকে হাসির বদলে শুনিয়েছে কান্নার রোল....
আর তোমার ললাটের দীপ্তিময় সেই সূর্যকে পূনর্বার আবিষ্কারের মানসে স্বাগ্রহে অপেক্ষমাণ আজও কোন এক অজানা সৈকতে।অনড়-অটল থাকতে থাকতে আমার চিবুক অবধি আজ চোরাবালির দখলে।দিনান্তে গোধূলির আলো আঁধারিতে আমার তৃষিত অক্ষি গোলক রক্তাক্ত করেছে সামুদ্রিক কাঁকড়া।
এখন আমার পছন্দের সেই নীল রঙ আমার জীবনের পরিত্যক্ত সরোবরে নীল পদ্ম হয়ে ফোঁটে।
আর আমার নীলাদ্রিতা....!
আজও নিরুদ্দেশ ভিন কোন অন্তরিক্ষে নীলিমার নীলে......
--------++++++---------