লগ্নটা ঠিক গোধূলির শেষ ভাগে।
সদ্য অস্তমিত সূর্যের বিচ্ছুরিত শেষ লালিমাটুকু পশ্চিমাকাশ
থেকে সম্পূর্ণমুছে যায়নি তখনো।
আলো আঁধারির লুকোচুরি খেলা।
জোনাকির পুচ্ছে যেন সন্ধ্যা বাতি জ্বলাতে শুরু করেছে
নিঝুম প্রকৃতি।
ঝিঁ ঝিঁ পোকার বেসুর বাঁশরি সন্ধ্যার নিস্তব্ধতাকে ভাংতে
শুরু করেছে সবে।


নানা বাড়ির সেই কৃত্রিম নদের ধারে সান্ধ্য ভ্রমণে
বেরিয়েছি তুমি,আমি আর মাসী।
উদারমনা সমবয়সী মাসীর ইচ্ছেকৃত ক'কদম সামনে হাটা
ছিল শ্যাম আর রাঁধাকে প্রেম লীলায় ভাসিয়ে দেওয়ার
সুবর্ণ সুযোগ মাত্র।


এই প্রথম আমি তোমার এতো কাছে এসেছি।
তোমার সুবিন্যস্ত দীঘল কালো খোলা চুলে আধো ঢাকা মুখ
পুরোটা দর্শনের আজন্ম বাসনায় একদৃষ্টে তোমার মুখপানে
চেয়ে আছি তৃষ্ণার্ত আমি।
তোমার বয়স কত হবে তখন?
বড়জোর চৌদ্দ।
উপচেপড়া যৌবনের বাঁধ ভাঙ্গা ঢেউয়ে সদ্য তোমার অঙ্গ দোলে।
নাকে,মুখে,বুকে তুমি যেন সাক্ষাত লক্ষ্মী দেবী।
আর আমি মাধ্যমিক পাশ করেছি মাত্র।

বাক্যালাপের কোন এক ফুরসতে আচানক আমার ভয়ার্ত
ডান হাতটা নিবিড় মমতায় জড়িয়ে ধরে তোমার বাম হাত।
আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল সহসাই তৈরী করে চীনেরপ্রাচীর,
সুনিপুণ গাঁথুনিতে।আমি যেন তোমার হৃদয়ের ত্বরিত
স্পন্দন অনুভব করছিলাম আমার করতলে।
রাজ্যের লজ্জা প্রতীয়মান ছিল তোমার চোখে মুখে।
তুমি ভয় আর লজ্জায় একেবারে নুয়ে পড়েছিলে
যেমন লজ্জাবতী লতা।


এই প্রথম বারের মতো আমি তোমাকে বললাম "জানু",
"উম"তোমার ভয়ার্ত কন্ঠের জবাব।
তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাস?
এবার সব লাজ ভুলে সাহসী চোখে আমার চোখে
তাকিয়ে বললে "খুব ভালোবাসি"।


আমি যেন হাতের মুঠোয় স্বর্গ পেলাম।
তোমার ধরে থাকা কোমল হাতটা খানিক উপরে নিয়ে আমার
বুভুক্ষ ঠোঁটে এঁকে দেই গভীর চুম্বন তোমার হাতের উল্টো পিঠে।
কয়েক দন্ড জড়িয়ে রাখি আমার কপোলের সাথে
নিবিড় আলিঙ্গনে।
এই প্রথম এই শেষ ছোঁয়া।


শিশির পতনের শব্দের মতোই মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে
গেছে এরই ফাঁকে একুশটি বছর।
সময়ের নিষ্ঠুর ব্যবচ্ছেদে ভাটা পড়ে প্রেমে।
জীবনের চাহিদায় তুমি হয়ে গেলে ভিন গ্রহের বাসিন্দা
আর আমি হলাম মসলিন তাতি।
তোমার ক্ষণকালীন প্রেমের মায়া জড়ানো প্রতিটি
রেশমি সুতোয় বুনেই চলেছি তোমার ভালোবাসার
মসলিন,আমার সুনিপুণ কুশলী হাতে।


তুমি হয়তো বেমালুম ভুলেই গেছ সেই দিনটির কথা,
অথচ আজ ও আমি পরম পুলকে শিহরিত হই সেই
রোমাঞ্চকর স্মৃতি রোমন্থনে।
সেদিনের সেই অতোটুকু উষ্ণতা আর তোমার দেওয়া
সাতখানা চিঠিকে বক্ষে ধারণ করে আজো আমি
এতোটা বছর আছি শুধু তোমার প্রতীক্ষায়।


জানু,তুমি আজ কার সংসারে?
কার ঘরে জ্বালো দ্বীপ?
সুখ আলিঙ্গনে উষ্ণতা দাও কার লোমশ বুকে?
ভালোবেসে একদা যাকে "হৃদয়"বলে  ডাকতে,
আজ তোমার প্রেমময় হৃদয়ের মাঝে সেই হৃদয়ের জায়গা কোথায়?
জীবন তো মানুষের একটাই,তাই"জানু"ও একজনই হয়।
তুমি ছিলে,আছ,থাকবে অনাদি অনন্তকাল একান্তই আমার হয়ে....


আজ তোমার জন্মদিনে দিগ্বিজয়ের উন্মাদনা দেখ আমার
চোখে মুখে।
সুদীর্ঘ প্রতিরক্ষার অনলে পোড়ানো আমার বিশুদ্ধ প্রেম
তোমায় উৎসর্গ করবো বলে নতজানু আমি প্রতিক্ষারত
তোমারই সিংহদ্বারে,ভিখারীর বেশে।
সমুখে এসে কৃপা কর,নাইবা দিলে প্রেম,
ভিক্ষার ছলে দর্শনটুকু তো দাও।
এ পোড়া চোখ তোমাকে দেখে তৃষ্ণা মেটাক জন্মোৎসবের বেসে।।
--------------++++++++++++-----------