সাধ ছিল কবি হবো।
পোড়া মনের দাওয়ায় বসে তোমায় নিয়ে
লিখবো একটা পূর্ণাঙ্গ প্রেমের কবিতা
হৃদয়ের নির্যাসে।
আগুন ঝরা ফাগুনের দিনে যখন কৃষ্ণচূড়ার
মগডালে থাকতো বাঁধভাঙা যৌবন।
যখন নগ্ন পলাশের নিসৃত পরাগে পাখনা
ভেজাতো  উত্তেজিত অলিকূল।
তখন সে ষোড়শী পলাশের ছড়ানো আবীরে
মনের মাধুরী মিশিয়ে তোমাকে নিয়ে একটা
প্রেমের কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম আমি।


চৈতি রাতের তৃতীয়া তিথিতে যখন মেদহীন
জোছনা ছড়াতো  গর্ভবতী চাঁদ।
বুনো সারসের কোলাহল শেষে যখন
নিস্তব্ধ হত বনভূমি,
যখন বিরহিণী ডাহুকের বুকফাটা আর্তনাদ
শেষে প্রকৃতি ঘুমাতো রাত্রির জঠরে,
চারিদিকে  যখন বিরাজ করতো সুনসান
নীরবতা, ঠিক তখনই আমি তোমায় নিয়ে
সেই কবিতাটা লিখতে চেয়েছিলাম,
একটা উচ্ছ্বসিত প্রেমের কবিতা।


বিষণ্ণ শ্রাবণের কোন অলস দুপুরে যখন
আমার টিনের চালে ঝমঝম করে অবিরাম
ঝরতো আকাশের কান্না।
যখন থৈ থৈ পুকুরে জলকেলিতে মত্ত
থাকতো একপাল দিশেহারা হাঁস।
আমি জানালার গ্রীল ধরে একদৃষ্টে
দেখতাম ভাসমান জলের বুদবুদ।
সেই অখণ্ড অবসরে আমি তোমাকে
নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম।
একটা তুমিময় কবিতা।
একটা অঘোষিত প্রেমের কবিতা।
একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য জীবনের উপেক্ষা আর
অবহেলার কবিতা।
একজন প্রেমিকের অকৃত্রিম প্রেম আর
বিসর্জনের কবিতা।
যার প্রচ্ছদের তৈলচিত্রে প্রস্ফুটিত হবে
তোমার জীবন্ত অবয়ব।
যার নির্ঘণ্ট থেকে যবনিকার প্রতিটি স্তবকে
থাকতো শুধু তুমি তুমি আর তুমি,
ঠিক তেমন একটা কবিতা।


আমার লেখা হয়নি কিছুই।
বুকের গহীনে লালিত আনকোরা স্বপ্নগুলো
অধরাই রয়ে গেল অদ্যাবধি।
সহস্র বছরের প্রতীক্ষায় শুকিয়ে গেছে
দোয়াতের কালি, ভেঙে গেছে নিব,
ধূলির আস্তরণে আচ্ছাদিত আজও
অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি।
তবুও আমার পাথর চোখের দৃষ্টিসীমায়
ঐ একটি মুখই সমুজ্জ্বল।
এই অকবির মনন ও মগজে তবুও একটি
কথাই বদ্ধমূল,
একদিন কবি হব, শুধু তোমার কবি।
তোমাকে নিয়েই লিখবো একটা পূর্ণাঙ্গ
প্রেমের কবিতা।
মাখামাখি ভালোবাসায় একটা পরিতৃপ্ত
জীবনের কবিতা, দেখে নিও।
------------++++++---------